ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

রাজপথে নামার আগে তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতে চায় বিএনপি

আপডেট : ১২ জুন ২০২৪, ০৮:০২ পিএম

সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। তবে দ্বাদশ নির্বাচনের পর মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মনে আগের মতো উচ্ছ্বাস ও আত্মবিশ্বাস নেই। বিএনপির কর্মসূচিতে উপস্থিতিও আগের তুলনায় অনেক কমেছে।  নিজেদের ঘর গুছিয়ে শরীকদের নিয়ে শিগগির রাজপথে নামতে চায় বিএনপি। নানা কৌশলে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে চায় দলটি। নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও উজ্জীবিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে সফর করছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আশ্বাস দিচ্ছে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহার পর বৃহত্তর আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা বিএনপি ও তার মিত্রদের। এর আগে, জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করতে চায় বিএনপি। দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিসহ জনদুর্ভোগ সামনে রেখে সভা, সেমিনার, সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এর মধ্যদিয়ে নেতা-কর্মীদের আগের মতো মাঠে নামানো হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন্দ্র থেকে তৃণমূল মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে বৈঠক করছেন। 

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ও বিএনপির একদফার আন্দোলন ঘিরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে এখনও ঘরবাড়ি ছাড়া। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও নেতা-কর্মীরা নানান কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগ টানা ৪ বার সরকার গঠনে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আবারও ধারাবাহিক রাজপথের কর্মসূচিতে যেতে চায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এজন্য জনমত তৈরির পাশাপাশি জনগণকে মাঠে নামাতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সুশীল আর বুদ্ধিজীবীদের সক্রিয় করতে হবে। এ লক্ষ্যে আবারও একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করতে চাইছেন বিএনপির হাইকমান্ড।

দেশের তরুণদের সম্পৃক্ত করতে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দলকে সক্রিয় করা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চার সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেছেন। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সাংগঠনিক জেলা সফর শুরু করেছে ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা। অব্যাহত কর্মসূচির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাবে বিএনপি। এই সময়ে বিগত আন্দোলনে গুম, খুন, পঙ্গু এবং গ্রেপ্তার নেতাদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করা হবে।

এ ছাড়া দলীয় নেতা ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যারা টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে কথা বলেন তাদের নিয়েও আলাদা বৈঠক করেছেন। এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন ইস্যুতে তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব ও মতামত পর্যালোচনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। 

গত ১২ থেকে ১৬ মে যুগপৎ আন্দোলনের বিভিন্ন দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের অবস্থানসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

জানা গেছে, সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির হাইকমান্ড বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নেতা-কর্মীদের আগের মতো উজ্জীবিত করতে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটি। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে সারাদেশে ব্যাপকভাবে ১৫ দিনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। প্রতিষ্ঠাতার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্মরণে দেশব্যাপী ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন এসব কর্মসূচির মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা মাঠে চাঙ্গা হবে। এ ছাড়া সামনে বেশকিছু জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুদায়িত্ব যাদের সেই ঢাকা মহানগরের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ প্রায় প্রতিদিনই সাংগঠনিক বৈঠক, কর্মীসভা, বর্ধিত সভা করে যাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, থানা, ওয়ার্ড ও অঞ্চলভিত্তিক কার্যক্রম চলছে। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে নিয়মিত। দীর্ঘদিন আন্দোলন করতে গিয়ে তারা ব্যাপকভাবে নির্যাতিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন দলকে সংগঠিত করার কাজ করছি।

কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, গত ২৪ মে থেকে রাজশাহী বিভাগ সফরের মধ্যদিয়ে কৃষক দলের সাংগঠনিক সফর শুরু হয়। এই সফর পর্যায়ক্রমে সারাদেশে হবে। এই সফরে মূলত নেতা-কর্মীদের আবারও উজ্জীবিত করে আন্দোলনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিগত আন্দোলনে পঙ্গুত্ব বরণকারী, অসুস্থ নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, গত ১৮ মে থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে। এই সফরের জন্য ১৬টি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমকে ৪ থেকে ৫টি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে পঙ্গুত্ব এবং কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করবে। সেখানে নেতা-কর্মীদের আগামী আন্দোলনের জন্য একতা ও ঐক্যের বার্তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে আরও বেগবান করারও বার্তা দেওয়া হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, সারাদেশে নির্যাতিত, নিপীড়িত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো ও তাদেরকে আরও বেশি সংগঠিত করার লক্ষ্যে জেলা সফর করছেন বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। বর্তমান সরকার বিরোধী দল ও বিরোধী দলের সংগঠনকে নিশ্চিহ্ন করতে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাধাগ্রস্ত করছে। 

তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতির মধ্যেই আমাদের দল পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি। সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে।

MN/AST
আরও পড়ুন