গত এক সপ্তাহে কাঁচাবাজারে সবজি ক্রয়ে ক্রেতাদের মাঝে যে স্বস্তি ছিল, চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন (শুক্রবার) ও তা অব্যাহত রয়েছে। বাজারে সব ধরনের সবজি ৫০ টাকার আশে-পাশে বিক্রি হচ্ছে। তবে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডিমের দাম। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায় যা দু-দিন আগেও বিক্রি হতো ১৩৫ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক হালি লাল ডিম ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাদা ডিমও একই দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ডিমের দাম ছিল ৪৫ টাকা হালি। আজ ডিমের দাম হালিতে ৫ টাকা বেড়েছে।
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, বর্তমানে বাজারে ডিমের যে দাম তা যৌক্তিক। তবে হঠাৎ করে ডিমের দাম বাড়া বা কমার পিছনে খামারিদের কোন হাত নেই। এখনো বাজারে সিন্ডিকেটের কাজ করছে কারা, তা সবারই জানা। আর এ সিন্ডিকেট তেজগাঁও থেকে নিয়ন্তত্রিত হয় তা খোদ ভোক্তা অধিদপ্তর স্বীকার করেছে। তাহলে এই সিন্ডিকেট আগে ভাঙ্গতে না পারলেও এখন সময় এসেছে তা ভেঙ্গে দেওয়ার। এ ক্ষেত্রে নতুন সরকারের পাশাপাশি ছাত্রদের ভূমিকা রাখা উচিত।
এদিকে বাজারে সবজির দাম নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে সন্তুষ্ট। ক্রেতাদের দাবি, বর্তমানে রাস্তায় বাজারে সিন্ডিকেট নেই কোথাও চাঁদা দিতে হয়না। তবে আড়তে একটা সিন্ডিকেট এখনো রয়েছে। যদিও তাদের দাপট কিছুটা কমে এসেছে। আগে আড়তে কোন ট্রাক ডুললেই যেখানে ওপেন চাঁদাবাজরা ঝাপিয়ে পড়তো এখন আর সেই অবস্থা নেই। লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এখনো চাঁদা আদায় করছে। ফলে এদেরকে প্রতিহত করতে পারলে চাঁদাবাজদের মূল উপড়ে ফেলা যাবে বলেও তারা মত দেন।
এদিকে বাজারে পণ্যের দাম কমায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন ক্রেতারাও। আসিফ সরকার নামের একজন কাপড় ব্যবসায়ী জানান, বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ যেমন রয়েছে, দামও মোটমুটি ভালো পর্যায়ে রয়েছে। এতে করে গরিব মানুষও সবজি কিনতে পারছে। এক্ষেত্রে ছাত্ররা বড় ভূমিকা পালন করছে। তারা স্বৈরাচার পতন ঘটিয়ে থেমে থাকেনি। জনসাধারণ ও দেশের ভালোর কথা চিন্তা করে দেশে একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। তারা বাজার মনিটরিং ও করছে। এটা খুবই ভালো দিক। আগে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিলো বাজার মনিটরিং এর অভাবে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মত দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন আর ব্যবসায়ীরা চাইলেই দাম বাড়াতে পারছে না। এখন সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে পারলেই সারা বছর বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও তিনি মত দেন।
এদিক শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়। যদিও এ পণ্যটি দু-দিন আগেও বিক্রি হতো ২০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া বাজারভেদে প্রতি কেজি পটোল ৫০ টকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকা, ঝিঙে ও চিচিঙ্গা ৫০-৫৫ টাকা, আর বরবটি, বেগুন, করলা ও কাঁকরোল বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকায়। লাউ প্রতি পিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার মধ্যে।
মাছের বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩২০-৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৫০ টাকা ও পাঙাশ মাছ ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগের দুই সপ্তাহে এসব মাছে কেজিতে ৩০-৫০ টাকা বাড়তি দাম ছিল। রপ্তানি বন্ধ থাকায় ইলিশ মাছ দামও ধীরে ধীরে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আসতে শুরু করেছে।
তবে আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে রসুন। দেশি রসুন কেজি ২২০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ টাকায় এবং বড় দানার মসুর ডাল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।