ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সিন্ডিকেটে দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের, হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ

‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। শুধু সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে।’

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৮ এএম

নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেটের অবসান হয়নি। এখনও সবজির বাজারের সিন্ডিকেট বহাল থাকে কিভাবে তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে খতিয়ে না দেখায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ছিল চড়া। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রব্যমূল্য আরও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত এই সরকার কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। শুধু সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

তারা বলেছেনন, নিত্যপণ্যের দাম কমাতে যতটা জোর দেওয়া দরকার ছিল, ততটা গুরুত্ব শুরু থেকে দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এদিকে সরকার কিছু পণ্যের শুল্ককর কমিয়েছে। বাজারে অভিযান বাড়ানো হয়েছে। জেলায় জেলায় গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। যদিও এর আগেই ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানি কমে গেছে। এতে দাম বেড়েছে। ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম লাগামছাড়া। চাল ও আটার দাম বাড়তি। সবজির বাজারে যেন আগুন লেগেছে। সব মিলিয়ে কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ।

গণ-অভ্যুত্থানের পর স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রত্যাশা ছিল, তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় কমবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি, বরং নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বাড়ছে সবজির দামও।  একইসঙ্গে কিছুটা বেড়েছে চালের দাম।

সপ্তাহ ব্যবধানে খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর তালতলা ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে পটুলের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। শিম কেজি ২০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বড় আকারের ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

পাকা টমেটোর কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষীরা ৬০ টাকা এবং শসা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, পটল ১০০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর মুখী ১২০ টাকা, কচুর লতি ১২০ টাকা, ঝিঙে ও কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

এসব বাজারে মাঝারি আকারের লেবুর হালি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ১৪০ টাকা, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, চাল কুমড়া ৮০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

বাজারগুলোতে লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৫০ টাকা ও ডাঁটা শাক ২০ টাকা।

আলুর দাম স্থিতিশীল। নতুন আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বগুড়ার লাল আলু ৩৫ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আদার কেজি ১৪০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা, ইন্ডিয়ান রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।  দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা ও খেসারির ডাল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এসব বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।

বাজারে সোনালি কক মুরগির কেজি ২৭০ টাকা। সোনালি হাইব্রিড ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ২৯০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৬৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশের কেজি আকার-ওজনভেদে এক হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।


এসব বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস এক হাজার ১৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকা।

এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সেলিম রায়হান ফেসবুকে লিখেছেন, ট্রাকে থাকা অবস্থায়ই কারওয়ান বাজারে চারবার ডিমের হাতবদল হয়। এখন পর্যন্ত এই সরকার কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। শুধু সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এই অভ্যুত্থানের প্রাথমিক মাহাত্ম্য কী?

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওই সরকারের সর্বশেষ আড়াই বছরে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। সরকারও বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল, পানি ও সারের দাম দফায় দফায় বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন,সরকার পতনের আন্দোলনে নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও শ্রমজীবী মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় বোঝা যায়, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি তাঁদের অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে দ্রব্যমূল্য নিয়ে বলেন, জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ সরকার সচল করেছে।মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল জানান, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে আনার নীতি গ্রহণ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ৫ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ ও আলু আমদানিতে শুল্ককর কমানো হয়। পদক্ষেপ এর চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। ফলে বেড়ে যায় আরও কিছু পণ্যের দাম। 

এ বিষয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। একটু সময় লাগবে। ভোজ্যতেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পাম তেল। নিম্ন আয়ের মানুষ মূলত খোলা পাম তেল ব্যবহার করেন। খাদ্যশিল্পে পাম তেল ব্যবহার করা যায়।

FJ
আরও পড়ুন