ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার, মসলার দাম লাগামহীন

আপডেট : ১০ জুন ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম

কোরবানি ঈদের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। এরইমধ্যে অস্থির হয়ে উঠেছে ঈদকেন্দ্রীক আনুষঙ্গিক নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে মসলার দাম ব্যাপক বেড়েছে। যা নিয়ে খোদ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, বাজার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

প্রতিবছর ঈদ ঘনিয়ে আসলেই মসলার বাজার উত্তপ্ত হয়ে উঠে। চলতি বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিশেষ করে ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে গত একমাস ধরে সব ধরণের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার মনিটরিং করেও মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানা যাচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।

ঈদুল আজহা সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে শনিবার (৮ জুন) ঢাকাস্থ মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা জানান, পণ্য আমদানিতে বিভিন্ন স্তরে শুল্ক দিয়ে দাম বাড়ায় এনবিআর। কিন্তু বাজারে সেই পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীদের পেছনে ম্যাজিস্ট্রেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। জরিমানা করা হয়, লাঞ্ছিত করা হয়। তাই হয় আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেন। তা না হলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বলেন।

দাম বাড়ার বিষয়ে কথা হয়, কারওয়ান বাজারের মেসার্স জনতা বাণিজ্যালয়ের বিক্রয় প্রতিনিধি বাদল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেও বাজারে আদার খুচরা দাম ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। কিন্তু গত তিন-চার দিন ধরে বাজারে আদার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের আগে এ দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই। শুধু তাই নয়, আগামী কয়েকদিনে আদার দাম ৪০০ টাকা ছোঁয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। 

এ সময় কাওরান বাজারে আদা কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ফয়সাল আহমেদ বলেন, বাজার ব্যবস্থার ওপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সবাই ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে। বাজারের সব ব্যবসায়ী এক। তাদের দামের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। দোকান ভেদে আদা, রসুনের দামে ১০-২০ টাকা পার্থক্য। আমরা সাধারণ জনগণ কিভাবে সংসার চালাব, দেশের নীতি নির্ধারকরা চিন্তা করেন বলে মনে হয় না। আমাদের কি বেতন বেড়েছে? আগে ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ ছিল এখন তা আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এখন পরিবারের তিন বেলা খাবার যোগাড় করাই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।

গত ৭ জুন একটি অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, বাজেটে কর কমানোর ফলে নিত্যপণ্যের দাম কমবে। এবারের বাজেটে ১৭২টি পণ্যের ওপর শুল্ক-কর কমানো হয়েছে। আমরা যখন দেখতে পাই, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন ট্যাক্স কমিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বাজারে কারসাজি করে অযৌক্তিকভাবে কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কোরবানি এলেই গরম মসলার দাম বাড়ে। গত এক মাসে গরম মসলার দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এভাবে দাম বাড়ার কথা নয়। তাহলে নিশ্চয়ই বাজারে কোনো কারসাজি হচ্ছে। এ সময় অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

রোববার (৯ জুন) সকালে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দারুচিনি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, জিরা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, এলাচ প্রকারভেদে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা, গোলমরিচ ৮৮০ থেকে ৯০০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা, তেজপাতা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শুকনো মরিচ মানভেদে ৩৮০ থেকে ৪৩০ টাকা, আলুবোখারা ৯৯০ টাকা, কাজুবাদাম ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা ও ধনিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ার ফলে আমদানি কমায় মসলার দাম বেড়েছে পাইকারি বাজারগুলোতে। ফলে দাম বাড়ছে খুচরা বাজারেও। আমদানি না বাড়ালে ঈদে দাম আরও বাড়তে পারে।

MB/FI
আরও পড়ুন