বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন সামনে রেখে জমে উঠেছে বিতর্ক। সোমবার ছিল বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের শেষ সভা। নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পর শুরু হয়ে সেই সভা শেষ হয় গভীর রাতে। অথচ যে কারণে এই সভা ডাকা হয়েছিল-কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকার খসড়া অনুমোদন, তা হয়নি। ফলে নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় শুরুতেই প্রশ্নের মুখে পড়ল বিসিবির নির্বাচন।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা ছিল। তার আগে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে জমা দিতে হতো কাউন্সিলর মনোনয়ন। কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে রাত ৯টার পরও আসতে থাকে ফরম। এমনকি সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের নামও আসে নির্ধারিত সময়ের অনেক পর। বোর্ড পরিচালক ইফতেখার রহমান জানান, সময় শেষ হলেও আসা সব নাম নোটসহ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে বৈধতার সিদ্ধান্ত কমিশনের ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই প্রক্রিয়া ঘিরে আদালতের হস্তক্ষেপও ঘটেছে। দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট হয়েছিল হাইকোর্টে। যদিও পরে চেম্বার আদালত সেটি স্থগিত করে। তবু আদালতের রায়ের জটিলতায় পুরো প্রক্রিয়া আটকে যায়।
সবচেয়ে বেশি বিতর্ক উঠেছে সভাপতির একক সিদ্ধান্ত ঘিরে। ইফতেখার রহমান মিঠু স্বীকার করেছেন, সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সভাপতি আমিনুল ইসলাম নিজে, অন্য পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই। এমনকি নজিরবিহীনভাবে তিনি নিজেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। কেন প্রধান নির্বাহীকে না দিয়ে তিনি স্বাক্ষর করলেন, সেই প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ইফতেখার হাসি ছাড়া কিছু বলতে পারেননি।
অন্যদিকে, সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠেছে। সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল অভিযোগ করেছেন, ‘এটা নির্বাচন নয়, সিলেকশন চলছে।’ একই সুরে ক্লাব প্রতিনিধি ও সাবেক কর্মকর্তারা অভিযোগ তুলেছেন, সরকারের একটি অংশ নিরপেক্ষ নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে প্রভাব খাটাচ্ছে। এমনকি বিসিবি ঘেরাওয়ের হুমকিও এসেছে কয়েকজন কাউন্সিলরের কাছ থেকে।
এমন অবস্থায় বিসিবি নির্বাচন ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের অচলাবস্থা। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ না হওয়ার কারণে তফসিলের পরবর্তী ধাপও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী ৬ অক্টোবর নির্ধারিত রয়েছে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন এবং সেদিন রাতেই সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনের ভোট। কিন্তু ভোটার তালিকা নিয়েই যখন ধোঁয়াশা, তখন এই নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে হবে তা নিয়ে বাড়ছে সংশয়।