বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা অবশেষে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনের জন্য কাউন্সিলর তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল সোমবার সন্ধ্যায়, কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় তালিকাটি প্রকাশ করা হয়। তালিকা ঘোষণার ঠিক আগে সংশোধিত তফসিল প্রকাশ করায় নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
প্রকাশিত তালিকায় মোট ১৭৭ জন কাউন্সিলরের নাম রয়েছে। তবে নরসিংদী, সিলেট, নওগাঁ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি ফাঁকা রাখা হয়েছে। কেন এই ছয় জেলার নাম বাদ পড়েছে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়টিই এখন সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হয়ে উঠেছে।
খসড়া তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বেশ কিছু আলোচিত ক্রিকেটার ও সাবেক বোর্ড কর্মকর্তারা। বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর, সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ রেঞ্জার্স ক্রিকেট একাডেমির কাউন্সিলর হয়েছেন শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন জমা দিয়ে। আরেক সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ভোটার হয়েছেন ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব থেকে। এ ছাড়া নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে রাখা হয়েছে ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে। আবাহনী, মোহামেডান, প্রাইম ব্যাংক, গাজী গ্রুপ, ব্রাদার্স, রূপগঞ্জ টাইগার্স, শাইনপুকুরসহ প্রিমিয়ার ডিভিশনের বিভিন্ন ক্লাব থেকেও কাউন্সিলর মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
তালিকায় আরও আছেন সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, রকিবুল হাসান, হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ আশরাফুল এবং সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে জাভেদ ওমর বেলিম, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, খালেদ মাসুদ পাইলট, নিয়ামুর রশিদ রাহুল, হাসিবুল হোসেন শান্ত প্রমুখ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে নির্বাচনী ভোটার হয়েছেন কোয়াব সভাপতি প্রার্থী সেলিম শাহেদ এবং নারী আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসি। অপ্রত্যাশিতভাবে কুমিল্লা জেলা থেকে ভোটার হয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর এবং টাঙ্গাইল জেলা থেকে ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামি।
তবে খসড়া তালিকা নিয়ে আপত্তির জায়গা একাধিক। সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরি করেছে ক্যাটেগরি–২ এর কাউন্সিলর সংখ্যা। এখানে থাকার কথা ছিল ৭৬ জনের, কিন্তু রাখা হয়েছে মাত্র ৬১ জনকে। দুদকের তদন্তাধীন ১৮ ক্লাবের মধ্যে ১৫টিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিসিবির ব্যাখ্যা, ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও জাতীয় স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাদ পড়া ক্লাবগুলো সহজে মেনে নেবে না, তাই আইনি লড়াইয়ের সম্ভাবনাও জোরালো।
বিতর্কিত আরও একটি বিষয় হলো সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের অন্তর্ভুক্তি। খসড়া তালিকা প্রকাশের সময়সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে না বাড়িয়েই সোমবার রাত সাড়ে আটটায় তার মনোনয়ন গ্রহণ করা হয়। এতে তার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একইভাবে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ একদিকে ভোটার, অন্যদিকে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য। এটিও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
খসড়া তালিকার ওপর আপত্তি গ্রহণ করা হবে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত, শুনানি হবে বৃহস্পতিবার। এরপর শুক্রবার বিকেল ৪টায় প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। সবকিছু ঠিক থাকলে ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রতীক্ষিত বিসিবি নির্বাচন।