চার মাস আগেও আমিনুল ইসলাম বুলবুল ছিলেন একজন পর্দার আড়ালের মানুষ, যিনি দেশের ক্রিকেটে ‘প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান’ হিসেবে পরিচিত থাকলেও বোর্ড প্রশাসনে ছিলেন একেবারেই নতুন মুখ। সেই বুলবুল আজ বিসিবি সভাপতির সম্ভাব্য উত্তরসূরি। শুরু করেছিলেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে, কিন্তু এখন বলছেন-তিনি নেমেছেন টেস্ট ইনিংস খেলতে।
গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এক গভীর আত্মবিশ্বাসে বললেন, ‘আমি নির্বাচন করছি, কিন্তু সভাপতির পদ নির্ভর করছে বাকিদের উপর। আমি কাউকে বাধ্য করছি না। আমি বিশ্বাস করি, যে আস্থা আমাকে এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে, সেটা কাজ দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছি।’
বুলবুলের নেতৃত্বাধীন এই চার মাসে জাতীয় দল জিতেছে টানা চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ‘এ’ দল গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সফরে, অনূর্ধ্ব-১৯ দল জিম্বাবুয়েতে জিতেছে ত্রিদেশীয় সিরিজ। মেয়েদের দল অংশ নিয়েছে বিশ্বকাপে। মাঠের বাইরে তিনটি বড় অর্জনও যোগ করেছেন তিনি-ঢাকায় সফলভাবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল সভা আয়োজন, বিসিবির টেস্ট স্ট্যাটাসের ২৫ বছর পূর্তিতে স্মরণিক অনুষ্ঠান এবং ক্রিকেট বিকেন্দ্রীকরণে ‘ত্রিপল সেঞ্চুরি’ উদ্যোগ।
বুলবুল বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা করেছি ‘ত্রিপল সেঞ্চুরি’ নামে-এটা শুধু আমার নয়, ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্যোগ। চট্টগ্রামের ১১ জেলায় আঞ্চলিক টুর্নামেন্ট করেছি, রাজশাহীতেও আয়োজন করেছি। গ্রাউন্ড উন্নয়নে এনেছি টনি হেমিংকে, আম্পায়ারদের জন্য সাইমন টফেল, লেভেল থ্রি কোচিংও এনেছি দেশে। কোচ, কিউরেটর, আম্পায়ার-সব জায়গায় উন্নয়ন শুরু করেছি।’
বুলবুল মনে করেন জেলা পর্যায়ে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া দেশের ক্রিকেট কাঠামো মজবুত করা যাবে না, ‘জেলার কাউন্সিলর, জেলার প্রেসিডেন্ট-এই কাঠামো তৈরি করতে হবে। ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে হলে নিচের স্তর শক্ত করতে হবে।’
তবে এই চার মাস ছিল শুধু উন্নয়ন বা পরিকল্পনার গল্প নয়। নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক, অনেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, তামিম ইকবালসহ ২০ জন প্রার্থী নির্বাচন বয়কট করেছেন। সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠেছে।
এই প্রসঙ্গে বুলবুল ছিলেন নিরপেক্ষ ও রক্ষণাত্মক, ‘কে আসছে না, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি শুধু বলতে পারি, আমি গঠনতন্ত্রের মধ্যেই থেকেছি। নির্বাচন নিয়ে যা করেছি, তার সবই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী।’
সেই আলোচিত চিঠি প্রসঙ্গেও বললেন, ‘সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, জেলা বা বিভাগের প্রতিনিধিকে হতে হবে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট। যেহেতু সংগঠন নেই, অ্যাড হক কমিটি আছে, সেই অনুযায়ী কাজ করেছি। তিনজন প্রতিনিধি কোয়ালিফাই করেছিল, তিনজন দিয়ে তো আর নির্বাচন হয় না-তাই সেই প্রেক্ষিতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।’
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন নিয়েও বললেন, ‘আমার মনে নেই আমি কবে বলেছি নির্বাচন করব না। তবে এটা ঠিক, উপদেষ্টা আমাকে সাহায্য করেছেন, আমি তাঁকে ধন্যবাদ দিই। একটা ভালো নির্বাচন নয়, একটা ভালো দল গড়ার চেষ্টা করেছি।’
এত কিছুর মাঝেও বুলবুলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উক্তিটি ছিল একদম শেষে, ‘যদি আপনারা মনে করেন আমি যথেষ্ট ভালো নই, আমি চলে যেতে প্রস্তুত। আমার একটাই লক্ষ্য—বাংলাদেশ ক্রিকেট। বিশ্বযুদ্ধগুলো হত না, যদি কেউ টেবিলে বসে আলোচনা করত। আমরা চেষ্টা করব আলোচনা দিয়েই এগোতে।’