জাহানারার অভিযোগে বিসিবির ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে এক ঝড় বয়ে গেছে কয়েক দিনের ব্যবধানে। দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম যখন মুখ খুললেন, তখন তার চোখের জল যেন শুধু ব্যক্তিগত বেদনা নয়, এক প্রজন্মের ক্রীড়ানারীর দীর্ঘদিনের অবদমিত কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে।

৬ নভেম্বর প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জাহানারা অভিযোগ তোলেন, জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক নির্বাচক ও টিম ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু এবং প্রয়াত ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদের কাছ থেকে তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তার কথায় উঠে আসে, তিনি বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-কে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। সাক্ষাৎকার চলাকালীন কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহানারা, আর সেই দৃশ্য যেন সমগ্র ক্রিকেটপ্রেমী সমাজকে নাড়িয়ে দেয়।

জাহানারার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর নীরবতা ভাঙেন আরও কয়েকজন নারী ক্রিকেটার। তারা অভিযোগ করেন, দলীয় রাজনীতি, পক্ষপাত ও মানসিক নির্যাতনের সংস্কৃতি নারী ক্রিকেটে অনেক পুরনো। ফলে বিষয়টি শুধু ব্যক্তিগত নয়, কাঠামোগত সমস্যার প্রতিফলন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে বিসিবি অবশেষে পদক্ষেপ নিয়েছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) গভীর রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বোর্ড জানায়, নারী ক্রিকেটে যৌন হয়রানি ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তারিক উল হাকিম। সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিসিবির পরিচালক রুবাবা দৌলা—যিনি নতুন বোর্ডে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত পরিচালক এবং বর্তমানে বোর্ডের একমাত্র নারী পরিচালক। কমিটির অন্য সদস্য ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা, তিনি বাংলাদেশ নারী ক্রীড়া সমিতির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট।

বিসিবির নির্দেশনা অনুযায়ী, কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। তারা সাক্ষ্যগ্রহণ, নথি যাচাই এবং প্রমাণ পর্যালোচনার মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করবে।

বিসিবির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বোর্ড এই ঘটনায় শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করবে এবং প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।