ইডেনে দুই দিনেই ২৬ উইকেট পতন!

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ হতেই ম্যাচের গড়ন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে পরিণতি বোধ হয় তৃতীয় দিনেই দেখা যাবে। ব্যাটারদের অব্যাহত বিপর্যয়, দুই দিনের মধ্যেই ২৬টি উইকেট পতন, ব্যাট ও বলের লড়াইয়ের বদলে টিকে থাকার সংগ্রাম, সব মিলিয়ে এই টেস্ট দাঁড়িয়ে গেছে অস্বস্তিকর এক দোলাচলে। পিচ নিয়ে ম্যাচের আগে কিউরেটর যতই ‘স্পোর্টিং উইকেট’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকুন, বাস্তবে এই পিচ ব্যাটসম্যানদের জন্য এক নির্মম পরীক্ষা। 

এই মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ৯৩ রান, হাতে আছে মাত্র তিন উইকেট। ভারতীয়দের তুলনায় ৬৩ রানে এগিয়ে আছে তারা। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা অপরাজিত ২৯ রানে এবং তার সঙ্গে ১ রানে সঙ্গ দিচ্ছেন করবিন বোশ। এই অবস্থায়ই দ্বিতীয় দিনের সমাপ্তি। 

ম্যাচ চতুর্থ দিনে পৌঁছাবে কিনা সে নিয়েই সন্দেহ। দক্ষিণ আফ্রিকা লিড খুব বেশি বাড়াতে না পারলে ভারত স্বাচ্ছন্দ্যে ম্যাচ জিততে পারে। তবে ব্যাটিংয়ের এই কঠিন পিচে ভারতের লক্ষ্য তাড়াও যে নির্ভার হবে না, সেটি মাথায় রাখতে হচ্ছে। বিশেষ করে অধিনায়ক শুভমান গিলের অবস্থা এখনো স্বস্তিদায়ক নয়, ঘাড়ের ব্যথায় তিনি প্রথম ইনিংসে ৪ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন। ভারতকে তাই সম্ভাব্যভাবে দশ ব্যাটার নিয়েই রান তাড়ার কাজ করতে হতে পারে।

প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেমেছিল মাত্র ১৫৯ রানে। সেই স্কোরের জবাবে ভারত দিন শুরু করে এক উইকেটে ৩৭ রানে। শুরুতে লোকেশ রাহুল ও ওয়াশিংটন সুন্দরের ৫৭ রানের জুটি ভারতের ইনিংসকে এগিয়ে নিলেও এরপর থেকে উইকেট পতনের মিছিল। ভারতের ইনিংস শেষ হয় মাত্র ১৮৯ রানে-তবুও প্রোটিয়াদের ওপর ৩০ রানের লিড নিয়ে। রাহুল করেছিলেন সর্বোচ্চ ৩৯ রান। সুন্দরের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। ঋষভ পন্ত ২৪ বলে ২৭ রান করতে গিয়ে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে টেস্টে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কার মালিক হয়ে যান। শেবাগকে ছাড়িয়ে এখন টেস্টে পন্তের ছক্কা সংখ্যা ৯২-মাত্র ৮৩ ইনিংসে। যেখানে শেবাগের ৯০ ছক্কা করতে লেগেছিল ১৭৮ ইনিংস। পন্তের ছক্কা-ক্ষমতার প্রমাণ এখানেই স্পষ্ট। বিশ্ব ক্রিকেটে এই তালিকায় তিনি এখন সপ্তম, শীর্ষে রয়েছেন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস—২০৬ ইনিংসে ১৩৬ ছক্কা।

ভারতের ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার নৈপুণ্য দেখান দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার সিমন হারমার, যিনি মাত্র ৩০ রানের বিনিময়ে চার উইকেট নেন। ইয়ানসেন পান তিনটি। পিচে পাঠ বললেন যেন কথা শোনানোর মতো আচরণ করছে-হঠাৎ থেমে যাওয়া, খানিক লাফ, তো আবার সামান্য টার্ন। এই অনিশ্চয়তার ওপর দাঁড়িয়েই ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিন আক্রমণ সাজায়।

সেই আক্রমণই দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আনা হয়, আর সপ্তম ওভারেই জাদেজার বলে শর্ট লেগে ধরা পড়েন রায়ান রিকেলটন। রান তখন ১৮। তারপর থেকে প্রতিটি বিরতিতেই স্কোরবোর্ডে যোগ হচ্ছে উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের পক্ষে পরিস্থিতি বোঝার সময়ই যেন মিলছিল না। জাদেজার লাইন–লেংথ ছিল টাইট, কুলদীপের গতি পরিবর্তন ছিল বিভ্রান্তিকর, অক্ষরের বল সবসময়ই ছিল অনিশ্চয়তার সঙ্গী। জাদেজা ২৯ রানে নেন চার উইকেট, কুলদীপ পান দুটি, অক্ষর একটি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কেবল বাভুমাই কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন—তিনি একমাত্র ব্যাটার যিনি বিশের ঘরে পৌঁছেছেন।

এখন ম্যাচের দিক নির্দেশ করছে পিচই। দক্ষিণ আফ্রিকার লিড ৬৩, তাদের লক্ষ্য হবে এটিকে অন্তত ১০০–১২০’র মধ্যে নিয়ে যাওয়া, যাতে ভারতের স্পিনাররাও লক্ষ্য তাড়ায় চাপ তৈরি করার সুযোগ পান।