বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন। একদিকে শততম টেস্টের আবেগ, অন্যদিকে অভিজ্ঞ ব্যাটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মাইলফলক, এই দুইয়ের মিলনে শুরু হলো মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরির মহাকাব্য। আগের দিন ৯৯ রানের কাছে থেমে যাওয়া ইনিংস বৃহস্পতিবার সকালে মাত্র একটি রানেই পেয়ে গেল পূর্ণতা। আর সেই পূর্ণ সুতোয় গেঁথে গেল বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের নতুন রত্ন।
বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলার গৌরব অর্জন করেছেন মুশফিক। সেই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে তিনি শুধু জাতীয় রেকর্ডে নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের দুর্লভ তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছেন। টেস্টের দীর্ঘ ইতিহাসে মাত্র ১১ জন ক্রিকেটার এই কীর্তি করেছেন, এখন তাদেরই পাশে যুক্ত হলো বাংলাদেশের নামও। কলিন কাউড্রি, জাভেদ মিয়াঁদাদ, গর্ডন গ্রিনিজ, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, ইনজামাম-উল-হক, রিকি পন্টিং, গ্রায়েম স্মিথ, হাশিম আমলা, জো রুট ও ডেভিড ওয়ার্নারের পাশে মুশফিকের নামটি তাই এক নতুন গর্বের উচ্চারণ।
এই সেঞ্চুরি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মুমিনুল হকের সঙ্গে যৌথভাবে টেস্টে সর্বোচ্চ ১৩ সেঞ্চুরির কৃতিত্ব এখন মুশফিকের দখলে। দেশের হয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটারদের একজন হিসেবে তার সবুজ-লাল জার্সিতে দীর্ঘ যাত্রা, ঘাম, ধৈর্য আর পরিশ্রমের প্রতীক হয়ে এই ইনিংস জ্বলজ্বল করছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো উইকেটকিপার হিসেবে একশ টেস্ট খেলার অনন্য কীর্তি। বিশ্বে মাত্র আটজন উইকেটকিপার এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। মুশফিক সেই তালিকায় নিজেদের পতাকা তুলেছেন, যেখানে নাম আছে স্টুয়ার্ট, গিলক্রিস্ট বা বাউচারদের মতো কিংবদন্তিদের।
শততম টেস্টে যারা সেঞ্চুরি করেছেন, তাদের তালিকাটি মূলত ক্রিকেট মহাকাব্যের নায়কদের সারি। প্রথম শুরু হয়েছিল কাউড্রি দিয়ে, পরে মিয়াঁদাদ সেই কীর্তির আলো ছড়ান। ইনজামাম, স্মিথ, আমলা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই তালিকাটি হয়ে উঠেছে মর্যাদার প্রতীক। সাম্প্রতিককালে জো রুট ও ডেভিড ওয়ার্নারের ডাবল সেঞ্চুরি এই তালিকাকে আরও উঁচু করে তুলেছিল। তারই পাশে এখন বাংলাদেশের পতাকা উড়ালেন মুশফিকুর রহিম।
তবে গল্প এখানেই শেষ নয়। সামনে রয়েছে দ্বিতীয় ইনিংস। রিকি পন্টিং ছাড়া আর কেউ শততম টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করতে পারেননি। মুশফিকের সামনে সেই রেকর্ডেও স্পর্শ করার সুযোগ রয়ে গেছে।