ঢাকা
শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

‘বোরিং’ মুশফিকের অন্তহীন শৃঙ্খলা, পাশে ছিল পরিবার 

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৮ পিএম

বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিশ্রমী মুখ বলতেই প্রথমেই যার নাম আসে, তিনি মুশফিকুর রহিম। দুই দশকের পথচলায় তিনি এতটাই নিয়মতান্ত্রিক, এতটাই একাগ্র ছিলেন যে নিজেই নিজেকে কখনো কখনো ‘বোরিং’ মনে করেন। কিন্তু সেই বোরিং হওয়াটাই তাঁকে আলাদা করেছে, আলাদা করেছে শৃঙ্খলায়, আলাদা করেছে পেশাদারিত্বে, আলাদা করেছে সাফল্যের প্রতি দায়বদ্ধতায়। আর সেই ধারাবাহিকতার ফলেই শততম টেস্ট খেলতে নামার দিনে তিনি লিখলেন নতুন ইতিহাস, গড়লেন সেঞ্চুরির কীর্তি।

ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ। মাঠে তার ১০৬ রানের সেঞ্চুরি দলকে এগিয়ে দিয়েছে, আর সংবাদ সম্মেলনে এসে দলের জয়ের মতোই শান্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ কণ্ঠে নিজের কথা বললেন মুশফিক। বললেন তার চিরচেনা অনুশীলন, শৃঙ্খলা, আর সেই ‘একই রুটিনে’ বিশ্বাসের কথা, ‘আমি সত্যিই একজন বোরিং মানুষ,’ বললেন তিনি। “প্রতিদিন একই কাজ করি-একই অনুশীলন, একই প্রস্তুতি। সফলতা আমার হাতে নেই। কিন্তু চেষ্টা আর সততা আমার হাতেই থাকে। সেটা আমি কখনো ছাড়ি না।’

এ কথাগুলো শুধু সাংবাদিকদের জন্য বলা কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়, এগুলো তার ২০ বছরের অভ্যাস, তার চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। লর্ডসে ২০০৫ সালে যেদিন তিনি প্রথম টেস্ট খেলতে নামেন, সেদিনের উত্তেজনা আজও তাঁর ভেতরে অটুট। শততম টেস্টে নামার আগেও তিনি সেই একই অনুভূতি পেয়েছেন, ‘মনে হচ্ছিল, আমি যেন প্রথম ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। প্রতিটি টেস্টই আমার কাছে বিশেষ। প্রতিটি ম্যাচের আগে আমি নতুন করে নিজেকে তৈরি করি।’

তবে কেবল মাঠের মুশফিক নয়, পরিবারিক জীবনের মুশফিকও তার সাফল্যের পেছনে কতটা ঋণ আছে তা তুলে ধরলেন অকপটে। পরিবারের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ছিল হৃদয় ছোঁয়া। ‘আমার স্ত্রীই সবচেয়ে বেশি ত্যাগ করেছে,’ জানালেন তিনি। ‘আমি অন্যদের চেয়ে বেশি সময় অনুশীলনে দিই, বেশি সময় বাইরে থাকি। ঘর যদি শান্ত না থাকত, যদি সে আমাকে সাপোর্ট না দিত, তাহলে আমার পক্ষে এতটা পরিশ্রম করা সম্ভব হতো না।’

দুই সন্তানকে মানুষ করার দায়িত্বও মূলত সামলেছেন তার স্ত্রীই। মুশফিক বললেন, ‘ছোট বাচ্চা তো রাতে ঘুমায় না। কিন্তু আমার কখনো ঘুমহীন রাত যায়নি। কারণ সে সারারাত জেগে বাচ্চাদের দেখেছে, আমাকে বিশ্রাম নিতে দিয়েছে। তাই তার কাছে আমি সারাজীবন ঋণী।’

নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেও এখানেই থেমে যেতে চাইছেন না তিনি। বরং নিজের পথচলার শেষে আরও দু–একজন ক্রিকেটারকে তৈরি করে যাওয়ার স্বপ্ন রাখেন। ‘আমি খুশি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে,’ বললেন তিনি। ‘দেশের হয়ে প্রতিটি টেস্টই আমার জন্য গর্বের। আমি চলে যাওয়ার পর যেন এক–দুজনকে প্রস্তুত রেখে যেতে পারি-এই চেষ্টা থাকবে।’

আরও পড়ুন