দিন দুয়েক আগে সালাম মুর্শেদী পদত্যাগ করলেন। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ছিলেন তিনি। এই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাফুফেতে চিঠি দিয়েছেন সালাম মুর্শেদী।
তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি আগে অনেকবার উঠেছিল। তিনি বাফুফেতে ফিন্যান্স বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। সেই বিভাগের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছিলো বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা। তার সেই আর্থিক কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণও মিলে। তখনই দাবি উঠেছিলো বাফুফে থেকে তার পদত্যাগের। কিন্তু তিনি ছিলেন অনড়। কোনো অভিযোগ তাতে টলাতে পারেনি। পেছনের চার মেয়াদে প্রায় ১৬ বছর ধরে তিনি বাফুফের পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে বাফুফের ক্ষমতার চেয়ারে বসে থাকলেও এই সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলের মানের কোনো কার্যকর উন্নতি কিন্তু করতে পারেননি। উল্টো র্যাঙ্কিং পতন থেকে শুরু করে সার্বিকভাবেই বাংলাদেশের ফুটবল পেছনের দিকে হাঁটে। আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে শুধু বাজে ফলই নয়, আর্থিক অনিয়ম ও জালিয়াতির দায়ও চাপে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ঘাড়ে। কিন্তু এসব ব্যর্থতাকে পাত্তা না দিয়ে ঠিকই বাফুফের চেয়ার আঁকড়ে বসে থাকেন সালাম মুর্শেদী এবং তার দলবল। বাফুফের এই চেয়ারকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের মঞ্চ বানিয়ে ফেলেন তারা। ফিফার অনুদানের অর্থ নয়ছয়ের পরিস্কার অভিযোগও ছিল তার এবং তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিন্যান্স কমিটির বিরুদ্ধে। কিন্তু মুচকি হাসি হেসে সব অভিযোগকে পাশ কাটিয়ে বছরের পর বছর বাফুফের চেয়ারে জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকেন তিনি।
রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক চাপে বাফুফের সব বৈঠকেও নিয়মিত ছিলেন না সালাম মুর্শেদী। কিন্তু বিদেশে ফিফার এমন কোনো ট্যুর নেই তা তারা মিস করেছেন। বাফুফের অনুদানের অর্থ নিজেদের স্বার্থে এবং বিদেশ ভ্রমণে খরচ করাকে তারা ‘নিয়ম’ বানিয়ে ফেলেছিলেন। অথচ অর্থ সঙ্কটের অজুহাত তুলে বাফুফের কর্মচারিদের বেতন বাকি পড়ে যায় মাসের পর মাস। রেফারি কমিটির বকেয়া হয়ে পড়ে কোটি কোটি টাকা। অর্থ সঙ্কটের জন্য ফুটবলের ক্যাম্প বাতিল করা হয়। ট্যুর বাতিল হয়। বিদেশি কোচ পর্যন্ত ঠিক মতো বেতন না পাওয়া নিয়ে ফিফা এবং এএফসির কাছে অভিযোগ করেন। সেই সঙ্কট মেটাতে বারবার বাফুফেকে বড় অঙ্কের জরিমানার টাকা গুনতে হয়।
যে প্রতিশ্রুতি কথা শুনিয়ে এবং স্বপ্ন দেখিয়ে সালাউদ্দিন ও সালাম মুর্শেদীর কমিটি পেছনের ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ ফুটবলের মসনদে জেঁকে বসে আছে, তার ছিঁটেফোঁটাও পুরুণ করতে পারেননি তারা।
সালাম মুর্শেদি খেলোয়াড়ি জীবনে আশির দশকে একজন আইকনিক ফুটবলার ছিলেন। ঘরোয়া ফুটবলে অনেক গোলের রেকর্ড এবং ম্যাচ জেতানোর অর্জন রয়েছে তার ক্যারিয়ারে। কিন্তু ফুটবল সংগঠক হিসেবে তার সাফল্য এবং কৃতিত্ব শূন্যের কোটায়।
পেশাদারী ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার তিনি ব্যবসা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেন। এরই মাঝে রাজনীতিতে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন তিনবার। সংসদে ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি। নিজের রাজনৈতিক পরিচয় এবং দেশের ফুটবলকে তিনি মুলত তার স্বীয় ব্যবসায়িক উন্নতির সিঁড়ি হিসেবেই ব্যবহার করেছিলেন।
আর তাতে ধনমানে তার উন্নতি হয়েছে নিরঙ্কুশ এবং দেশের ফুটবলের অবস্থা হয়েছে বাতাস বেরিয়ে যাওয়ার পর চুপসানো চেহারা! অনেক দেরিতে হলেও ফুটবল থেকে পদত্যাগ করলেন সালাম মুর্শেদী। কারণ এখন আর ফুটবল থেকে তার নেওয়ার কিছু নেই। বরং এখন নিজেকে আড়ালে রাখাটাই তার রক্ষাকবচ!