২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন যেসব তারকা

প্রতি বছরই লাখো ভক্তের হৃদয় ভেঙে অবসরে যান ফুটবল তারকারা। ২০২৪ সালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আরও একটা বছর বিদায় নিচ্ছে। এই বছর প্রায় পুরোটা জুড়েই যেমন মাঠে ছিল ফুটবল, তেমনই বিশ্ব ফুটবলে অনেক কিংবদন্তি এই বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলেছেন, নিয়েছেন অবসর। 

আবার কিছু ফুটবলার আছেন যারা ফুটবল থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছেন এই বছরেই। এমন কিছু তারকাকে নিয়ে খবর সংযোগ.কম এর পাঠকদের জন্য থাকছে তেমনই কয়েকজন ফুটবল তারকার অবসরের খবর...

আনহেল ডি মারিয়া: আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রাণভোমরা ছিলেন আনহেল ডি মারিয়া। তাকে ম্যান ইন ফাইনাল নামেও ডাকেন ভক্তরা। গত তিন বছরে আর্জেন্টিনা যে চারটি শিরোপা জিতেছে তার সব গুলোতেই খেলেছেন তিনি। তার একমাত্র গোলেই ব্রাজিলকে হারিয়ে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছিল আলবেসেলেস্তেরা। এর মাধ্যমে কোপায় ২৮ বছরের শিরোপা খরাও ঘোচায় আর্জেন্টিনা।

পরের বছর ফিনালিসিমায়ও গোল করেন এই উইঙ্গার। আর্জেন্টিনা ৩৬ বছরের আরাধ্য বিশ্বকাপ জেতে ২০২২ সালে ফ্রান্সকে হারিয়ে। সেই ম্যাচেও গোল করেছিলেন ডি মারিয়া। সম্প্রতি তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন। তবে বেনফিকার হয়ে খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১৪৫ বার মাঠে নেমেছেন আনহেল ডি মারিয়া। গোল করেছেন ৩১টি।

লুইস সুয়ারেজ: আন্তর্জাতিক ফুটবলকে অবসর জানিয়েছেন উরুগুয়ের তারকা ‍লুইস সুয়ারেজও। বার্সেলোনার সাবেক তারকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন। তিনি উরুগুয়ে জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সুয়ারেজের গোল ৬৯টি। ম্যাচ খেলেছেন ১৪৩টি।

ম্যানুয়েল নয়্যার: গোলপোস্ট আগলে ও বিশ্বসেরা হওয়া যায় সেটি ম্যানুয়েল নয়্যার ফুটবল জগতকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন খুব ভালভাবেই। জার্মান গোলপোস্টের দেয়ালখ্যাত নয়্যারও জাতীয় দলকে গুডবাই জানিয়ে দিয়েছেন। এতে থামল তার ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক অধ্যায়। তিনি ২০১১ থেকে ২০২০ দশকের সেরা গোলকিপার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভসজয়ী নয়্যার গোলকিপার হিসেবে বিশ্বকাপ ও ইউরোতে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ফুটবলার।

থমাস মুলার: এ বছর দেশের জার্সিকে বিদায় জানিয়েছেন আরেক জার্মান স্ট্রাইকার থমাস মুলার। ইউরো থেকে বিদায়ের পর অবসরের সুর ওঠে। সেই সুরই পরে সত্যি করে জার্মানি দলকে বিদায় জানালেন ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। জাতীয় দলের জার্সিতে ১৩১ ম্যাচ খেলা মুলারের নামের পাশে রয়েছে ৪৫টি গোল।

টনি ক্রুস: বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার বলা হয়ে থাকে টনি ক্রুসকে। গত ইউরোর পর সব ধরনের ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই মিডফিল্ডার। জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবলের হয়ে অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন ক্রুস। ছয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও চারটি সুপার কাপের পাশাপাশি জার্মানির হয়ে ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপও জিতেছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই মিডফিল্ডার।

এছাড়া ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ও স্প্যানিশ লিগও জিতেছেন ক্রুস। জার্মানির জার্সিতে ১১৪ ম্যাচ খেলা ক্রুস গোল করেছেন ১৭টি। জার্মানির হয়ে বয়সভিত্তিক দলে ২৩টি গোল রয়েছে এই তারকার। রিয়ালের হয়ে ৪৬৫ ম্যাচ খেলা ক্রুস ২৮টি গোলের পাশাপাশি ৯৯টি অ্যাসিস্ট করেছেন। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলা ২০৫ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ২৪টি। সহায়তা ৪৯ গোলে। লেভারকুসেনের হয়ে ৪৮ ম্যাচে ১০ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট রয়েছে ক্রুসের।

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা: ইতিহাসের সেরা মিডফিল্ডারদের একজন ধরা হয় স্প্যানিশ তারকা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে। জাতীয় দলের হয়ে ২০১০ বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছেন ইনিয়েস্তা। তার গোলেই ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছিল স্পেন। সাবেক বার্সেলোনার এই মিডফিল্ডার জাপানিজ ক্লাব ভিসেল কোবেলের পর গত মৌসুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্লাব এমিরেটসে যোগ দিয়েছিলেন। সবাইকে স্তব্ধ করে অবসরের ঘোষণা দেন ৪০ বছর বয়সি এই তারকা। বার্সেলোনায় থাকাকালীন ইনিয়েস্তা লিগ শিরোপার পাশাপাশি, ক্লাব বিশ্বকাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ অনেক শিরোপা জিতেছেন।

ইলকায় গুন্দোয়ান: বর্তমান ফুটবলবিশ্বের অন্যতম আরকে সেরা মিডফিল্ডার জার্মানির ইলকায় গুন্দোয়ান। গত ১৯ আগস্ট তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন। এই জার্মান মিডফিল্ডার জাতীয় দলের জার্সিতে ৮২ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ১৯টি।

অলিভিয়ের জিরুদ: ফ্রান্সের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা অলিভিয়ের জিরুদ। জাতীয় দলের হয়ে ৫৭ গোল করেছেন এই তারকা। কাতার বিশ্বকাপে ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। গত জুলাইয়ে ইউরো টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল থেকে হেরে বিদায় নেয় ফ্রান্স। এরপর নিজেও ফ্রান্স ফুটবলকে বিদায় জানান লস অ্যাঞ্জেলসে সদ্য যোগ দেওয়া এই তারকা।

জেরদান শাকিরি: জুলাইয়ে শেষ হওয়া ইউরোর পর দেশের জার্সি ‍তুলে রেখেছেন সুইজারল্যান্ডের জেরদান শাকিরি। এতে ১২৫ ম্যাচেই থামে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। জাতীয় দলের জার্সিতে এই তারকার গোল রয়েছে ৩২টি। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে রয়েছে আরও চার গোল।

সুনীল ছেত্রী: ভারতীয় ফুটবলের পোস্টারবয় সুনীল ছেত্রী। তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার ওপরে রয়েছেন ১৩২ গোল করা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ১০৯ গোল করা লিওনেল মেসি ও ইরানের আলী দাই। সুনীল ছেত্রী ভারতের জার্সিতে ১৫১ ম্যাচে গোল করেছেন ৯৪টি। গত জুনে তিনি জাতীয় দলের জার্সিতে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলেছেন।

এডিনসন কাভানি: উরুগুয়ে ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা এডিনসন কাভানিও জাতীয় দলকে গুডবাই বলে দিয়েছেন। ক্ষিপ্র গতির এই স্ট্রাইকার যেকোনো দলের রক্ষণে কাঁপন ধরিয়ে দেয়ার জন্য যতেষ্ট ছিলেন। তবে ২০২২ বিশ্বকাপের পর থেকেই জাতীয় দলে উপেক্ষিত ছিলেন এই তারকা। সবশেষ কোপা আমেরিকাতেও জায়গা হয়নি উরুগুয়ে দলে। কে জানে হয়তো বুঝে গিয়েছেন জাতীয় দলে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। তাইতো তিনিও বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন উরুগুয়ে দলকে। জাতীয় দলের জার্সিতে কাভানির গোলের সংখ্যা ৫৮টি।

রাফায়েল ভারানে: ফরাসি ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানের অবসরটা অবাক করেছে ফুটবল ভক্তদের। মাত্র ৩১ বছর বয়সে ভারানের ইনজুরি তাকে অবসর নিতে বাধ্য করেছে। চলতি মৌসুমেই মাত্র ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে ইতালিয়ান ক্লাব কোমোতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি।

সাবেক এই রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলার ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে বেশকিছু শিরোপা জিতেছে। তার মধ্যে স্প্যানিশ লা লিগা, সুপার কাপ, এফএ কাপ অন্যতম। ফ্রান্সের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলা এই ডিফেন্ডার ২০১৮ সালে শিরোপা জিতেছেন।

পেপে: পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে’কে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারের একজন ধরা হয়। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদের এই ডিফেন্ডার গত পাঁচ মৌসুম ধরে স্বদেশী ক্লাব পোর্তোতে খেলছিলেন। তবে মৌসুম শেষে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি।

২০০৭ থেকে ২০২৪ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ পর্যন্ত পর্তুগালকে সার্ভিস দিয়েছেন ৪১ বছর বয়সি এই ডিফেন্ডার। ক্লাব ফুটবলে অনেক শিরোপা জিতলেও, জাতীয় দলের হয়ে একটি করে নেশন্স লিগ এবং ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন তিনি।

এ ছাড়া চলতি বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন স্পেনের ফুটবলার জেসুস নাভাস, ইংলিশ ডিফেন্ডার কিরান ট্রিপিয়ার, একই দলের ডিফেন্ডার হ্যারি মাগুইরে, বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার জন ভার্টোনহেন, সুইস গোলকিপার ইয়ন সমার, সার্বিয়ার অধিনায়ক দুসান তাদিচ, নেদার‌ল্যান্ডসের দালেই ব্লিইন্ড এবং ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রোজোভিচ।