যে ঝরনা থেকে ঝরছে রক্ত!

প্রকৃতি মাঝে মাঝে এমন কিছু অবাক করা ঘটনা দেখায় যা দেখে আমরা হতবাক হয়ে যাই। তার এমন কিছু খেলা আছে যা আমাদের চোখ কপালে তোলার জন্য যথেষ্ট। তেমনই এক আশ্চর্য দৃশ্য দেখা যায় বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকায়। সেখানে সাদা বরফের মধ্যে দিয়ে লাল রক্তের মতো পড়ছে পানি! এই দৃশ্যের নামই দেওয়া হয়েছে ‘ব্লাড ফলস’ বা রক্তপ্রপাত।

এই অদ্ভুত ঝরনা রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষিণে, অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে। চারদিকে শুধু সাদা বরফ আর বরফ। তার মধ্য দিয়ে লাল রঙের পানি গড়িয়ে পড়ছে। এই দৃশ্য দেখতে সারা বিশ্ব থেকে মানুষ ছুটে যান।

blood falls-4

এই রহস্যময় ঝরনাটি প্রথম দেখতে পান একদল গবেষক ১৯৩১ সালে। তখন থেকেই বিজ্ঞানীরা এই লাল পানির রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করতে থাকেন। বহু বছর গবেষণার পর ২০১১ সালে একদল বিজ্ঞানী এর রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন।

blood falls-2

প্রথমে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, হয়তো পানিতে কোনো লাল শ্যাওলা থাকার কারণেই পানি লাল দেখায়। কিন্তু পরে দেখা গেলো, বিষয়টি তা নয়। আসল রহস্য লুকিয়ে আছে মাটির অনেক গভীরে।

এই পানির উৎস হলো টমাস হিমবাহের বরফের নিচে একটি খুবই লবণাক্ত হ্রদ। এই পানিতে রয়েছে প্রচুর লোহা। যখন এই লবণাক্ত ও লোহা যুক্ত পানি বরফের নিচ থেকে বেরিয়ে বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তখন বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে মিলে সেই লোহা জারিত হয় (জং ধরা) ঠিক যেমন আমাদের আশেপাশের লোহার পাইপে বা খুঁটিতে লালচে বাদামি রঙের মরিচা ধরে। এই মরিচাই পানিকে দিয়েছে রক্তের মতো লাল রঙ।

blood falls-3

এই রক্তপ্রপাতের পানিতে বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের জীবাণু পেয়েছেন যা চরম প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। সাধারণ প্রাণীরা বেঁচে থাকার জন্য যেমন অক্সিজেন ব্যবহার করে, এই জীবাণুগুলো তেমনটি করে না। তারা বেঁচে থাকে পানিতে থাকা সালফেট নামক একটি উপাদান ব্যবহার করে। এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদেরকে অন্য গ্রহে যেমন মঙ্গলগ্রহে, প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে সাহায্য করছে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় বিশ লাখ বছর আগে সমুদ্রের পানি অ্যান্টার্কটিকার বরফের নিচে আটকা পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পানিতে চারপাশের পাথর থেকে লবণ ও লোহার মতো খনিজ পদার্থ মিশেছে। এরপর হিমবাহ গলে গলে সেই পানি আজকের এই রক্তপ্রপাতের রূপে আসছে।

blood falls-1

বিজ্ঞানীরা যতই ব্যাখ্যা দিন না কেন, সাদা বরফের মধ্যে দিয়ে লাল রক্তের মতো পানি পড়তে দেখলে যে কারোরই ভয় হবে! এই দৃশ্য দেখলে সত্যিই মনে হয় যেন প্রকৃতি নিজের হাতে এক অদ্ভুত ও ভয়ংকর সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। এই রহস্যময় ঝরনা প্রকৃতির আরও একটি অবাক করা নিদর্শন হিসেবে আজও মানুষকে বিস্মিত করে চলেছে।