প্রকৃতি (Nature) বলতে পৃথিবী তথা সমগ্র সৃষ্টিকে বোঝায়। আরও সহজ করে বললে মহাবিশ্বের যা কিছু মানুষের সৃষ্টি নয় এমন দৃশ্য-অদৃশ্য সমস্ত কিছুই প্রকৃতি বলে পরিচিত। আলো-বাতাস-নদী-সমুদ্র-পাহাড়-ঝরনা-ফুল-ফল-প্রজাপতি-মেঘ-বৃষ্টি এমনকি গহিন অরণ্য এসবই প্রকৃতির অংশ বিশেষ। প্রকৃতি কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ বা নেতিবাচক হয় না। তবে সহনশীলতা ও সম্প্রীতি বোধ থাকলেও সময়ের তাগিদে কখনো কখনো প্রকৃতিকে কঠোর প্রতিশোধপরায়ণ হতে হয়। তবে প্রকৃতির উপহার ও তার প্রয়োজনীয়তার কাছে সেসব কঠোরতা নিছকই তুচ্ছ বলা যায়।

মানুষের মতো প্রকৃতিও প্রাণের দাবি রাখে। তাছাড়া প্রকৃতি বেঁচে না থাকলে বাঁচবে না মানব সভ্যতা। বিশ্বের এত এত সব শক্তির সর্ববৃহৎ উৎস হলেও প্রকৃতি বরাবরই স্নিগ্ধ-অপ্রতীম সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী। প্রকৃতির কেবল বেঁচে থাকার রসদ দেয় এমন নয়। তার অনাবিল সৌন্দর্যে মন হারায় মানুষ। প্রকৃতির অনিন্দ্য রূপ-বৈচিত্র্য স্থান কাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। বলা যায় স্থান ও কালের পরিবর্তনের সাথে প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য, ব্যবহার বা প্রভাব বদলে যায়। তেমনি প্রকৃতি বদলে গিয়ে রাশিয়ায় সৃষ্টি করেছে বৈকাল হ্রদ।

রাশিয়ার বৈকাল হ্রদ প্রকৃতপক্ষে এক রত্ন সদৃশ লেক। রাশিয়ার সাইবেরিয়ার দক্ষিণভাগে অবস্থিত এই লেক পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় পানির হ্রদ। বিশ্বের গভীরতম এই হ্রদের আয়তন প্রায় ৩১,৫০০ বর্গকিলোমিটার ও সর্বাধিক গভীরতা ১,৬৩৭ মিটার। প্রায় তিন শতাধিক নদীর পানি এসে পড়েছে এই হ্রদে। পক্ষান্তরে কেবল নিম্ন আঙ্গারা নদীর মাধ্যমে এই হ্রদের জল বাইরে নিষ্কাশিত হয়। প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ বছরের পুরোনো এই প্রাচীনতম হ্রদ প্রকৃতির এক আশ্চর্য বিস্ময়। এই হ্রদ মৎস্যসম্পদে যেমন সমৃদ্ধ এবং এর আশেপাশের অরণ্য অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের এক বিপুল প্রাকৃতিক সম্ভার।

সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে বৈকাল হ্রদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, শীতকালে যখন তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়, লেকের জল জমে যায় এবং অসাধারণ বরফের সৃষ্টি হয়। এই বরফ ‘টারকয়েজ আইস’ বলেই বেশি পরিচিত। নীল রঙের এসব বরফ রৌদ্রের আলোয় জ্যামিতিকভাবে ঝলমল করে। এর সৌন্দর্য দেখে যে কারও মনে হতে পারে একেকটা বরফের অংশ যেন বিখ্যাত কোনো শীল্পীর দক্ষ হাতে গড়া নান্দনিক ভাস্কর্য। হঠাৎ কাউকে সেখানে নিয়ে গেলে সে হয়ত ভাববে সে রূপকথার কোনো রাজ্যে বিচরণ করছে।

‘টারকয়েজ আইস’ না দেখে এর সৌন্দর্য কল্পনা করা যেমন অসম্ভব তেমনি প্রথম দর্শনে নিজের চোখকেও অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। প্রকৃতি মাঝে মাঝে আমাদের মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে এমন প্রাকৃতিক ঘটনা দেখিয়ে যা বিশ্বাস করা কঠিন। তবে মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে এবং প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে প্রথমে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে।
