ঢাকা
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

যে দেশে মশা নেই !

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম

পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে মশার উপদ্রব আছে। কোথাও এটি শুধু বিরক্তির কারণ, আবার কোথাও এটি হয়ে দাঁড়ায় প্রাণঘাতী রোগের বাহক। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে মশা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগ ছড়ায়। কিন্তু অবাক করার মতো হলেও সত্যি- এই পৃথিবীতেই রয়েছে একটি দেশ, যেখানে আজ পর্যন্ত একটি মশাও চোখে পড়েনি। দেশটির নাম আইসল্যান্ড।

আশেপাশে মশা থাকলেও আইসল্যান্ড ব্যতিক্রম

আইসল্যান্ডের আশেপাশেই রয়েছে নরওয়ে, স্কটল্যান্ড ও গ্রিনল্যান্ড- যেখানে মশার একাধিক প্রজাতি পাওয়া যায়। তবুও রহস্যজনকভাবে আইসল্যান্ড এখনও সম্পূর্ণ মশামুক্ত। এমনকি অ্যান্টার্কটিকাতেও মশা নেই, তবে সেটি একটি মহাদেশ, কোনো দেশ নয়।

কেন নেই মশা

আইসল্যান্ডে মশা না থাকার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন গবেষকরা।

মূলত তিনটি বিষয়কে দায়ী করা হয়- 

প্রাকৃতিক বাধা

আইসল্যান্ড চারদিকে সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় মশাদের স্বাভাবিক উড়ার মাধ্যমে এখানে আসা প্রায় অসম্ভব।

আবহাওয়াজনিত সমস্যা

আইসল্যান্ডের ঠাণ্ডা ও অনিশ্চিত আবহাওয়া মশার জীবনচক্রের জন্য উপযুক্ত নয়। শীতকাল দীর্ঘ এবং বসন্ত ও শরতের সময় বারবার জমাট বাঁধা-গলা পানির কারণে ডিম, লার্ভা ও পিউপা পর্যায়গুলো টিকতে পারে না।

উপযুক্ত প্রজননস্থলের অভাব

যদিও কিছু উষ্ণ জলাশয় রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর পানি এত গরম বা রাসায়নিকভাবে এমন যে, মশার লার্ভা সেখানে বাঁচে না।

মশা পৌঁছালেও কেন টিকে থাকতে পারে না 

আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গিসলি মার গিসলাসন জানান, একবার তিনি গ্রিনল্যান্ড থেকে আসা একটি ফ্লাইটে মশা পেয়েছিলেন। অর্থাৎ, মশারা মাঝে মাঝে বিমানযাত্রায় পৌঁছাতে পারে। তবে তারা সেখানে স্থায়ী হতে পারে না- মূলত জীবনচক্রের প্রতিকূলতার কারণে।

মশার জীবনচক্রে রয়েছে ৪টি ধাপ: ডিম → লার্ভা → পিউপা → পূর্ণবয়স্ক মশা।

এই প্রতিটি ধাপের জন্য প্রয়োজন অনবরত তরল পানি। কিন্তু আইসল্যান্ডে বারবার বরফ গলে-জমে এই পরিবেশ ভেঙে পড়ে।

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যদি বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, তবে একদিন হয়তো আইসল্যান্ডেও মশা দেখা যেতে পারে। বসন্ত ও শরৎ উষ্ণ হলে পানির জমাট বাঁধা কমবে এবং মশার বংশবিস্তারের সুযোগ তৈরি হবে।

আমেরিকার নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইম্মো হ্যানসেন বলেন, আগে মশা ছিল না এমন অনেক অঞ্চলেই এখন মশা ছড়িয়ে পড়ছে। যেমন- হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, যা ১৮২৬ সাল পর্যন্ত মশামুক্ত ছিল।

রোগবাহী মশার ঝুঁকি কতটুকু

আইসল্যান্ডে ভবিষ্যতে মশা আসলেও, রোগবাহী এডিস মশাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ এই মশাদের জন্য প্রয়োজন গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া, যা আইসল্যান্ডে নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৮০ সাল পর্যন্ত উত্তর ইউরোপে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা কম।

বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র মশামুক্ত দেশ হলো আইসল্যান্ড। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অনন্য অবস্থানও হয়তো বেশি দিন থাকবে না।

LH/FJ
আরও পড়ুন