২০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ : সেলিম রায়হান

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ এসেছে। ২০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ।

দেশটির রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ (পারস্পরিক শুল্ক) হার কমিয়ে ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দেশের রপ্তানি খাতের জন্য ‘স্বাগতযোগ্য ও সময়োপযোগী।’

শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুক পোস্টে এ মন্তব্য করেছেন সেলিম রায়হান।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক পুনর্বিন্যাসে বাংলাদেশের হার ২০%-এ নেমেছে; শ্রীলঙ্কা ২০%, পাকিস্তান ১৯%, ভিয়েতনাম ২০% ও ভারতের ২৫%। এতে প্রতিযোগীদের সঙ্গে সমতুল্য অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সমন্বয়ের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর যে ঝুঁকি বা প্রতিযোগিতামূলক চাপ ছিল, তা কিছুটা কমবে। একই সঙ্গে, রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের বিঘ্নের আশঙ্কাও কমে আসবে।

তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে-চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ হার এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সেলিম রায়হান মনে করেন, এ সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক রপ্তানি প্রবাহে বড় প্রভাব ফেলবে। চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হলে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এটি একটি সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার, চীন যদি তুলনামূলক কম হারে শুল্ক সুবিধা পায়, তাহলে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশের জন্য এটি স্বল্পমেয়াদি স্বস্তি হলেও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রয়োজন। রায়হান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া সুবিধা ও গোপনীয় চুক্তিগুলোতেও স্বচ্ছতা দরকার।

এ প্রেক্ষাপটে তিনটি কৌশলগত অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান সেলিম রায়হান

রপ্তানি বহুমুখীকরণ: একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা বাজারে অতিরিক্ত নির্ভরতা দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলে। নতুন বাজার ও পণ্যে প্রসার জরুরি।

অভ্যন্তরীণ নীতিগত সংস্কার: বাণিজ্য, কর ও বিনিয়োগ খাতে কার্যকর সংস্কার এনে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা দরকার, যা বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করবে।

নির্বাচিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ): এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব গড়ে তোলা ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষা বলয়ের মতো কাজ করতে পারে।

সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুল্ক হ্রাস একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও এটি যেন আত্মতুষ্টির কারণ না হয়-এ বার্তাই দিয়েছেন সেলিম রায়হান। বরং, এটি একটি সতর্ক সংকেত, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য কৌশলকে আরও শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় ও প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে।