সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ইলিশ

ইলিশ মৌসুম শুরু হলেও বাজারে মিলছে না স্বস্তি। ঢাকার কারওয়ান বাজার, পলাশী বাজার ও চাঁদপুরের মতো ঘাঁটিতেও এক কেজির একটি ইলিশ মাছের দাম ছুঁয়েছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এক কেজির কম ওজনের মাছও মিলছে প্রায় দুই হাজার টাকায়। সরবরাহ কমে যাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই দাম বেড়ে গেছে হু হু করে।

বিক্রেতারা বলছেন, আগের তুলনায় মাছ কিনতেই এখন লাগছে ২০-৩০ শতাংশ বেশি টাকা, ফলে বিক্রিতে ভাটা পড়ছে। চাঁদপুর বণিক সমিতির প্রেসিডেন্ট আবদুল বারী জমাদার জানাচ্ছেন, সেখানে দেড় কেজির ইলিশ প্রতি কেজি তিন হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

কেন এত দাম

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলিশ কম পাওয়ার মূল কারণ আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা। ঘন ঘন সতর্ক সংকেতের কারণে জেলেরা মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। যারা যাচ্ছেন, তারাও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মাছ পাচ্ছেন না।

এছাড়াও নদীতে নাব্যতা কমে যাওয়া, পলি পড়ে ডুবোচর তৈরি হওয়া, দূষণ, জাটকা নিধন এবং কারেন্ট জালের ব্যবহার ইলিশের বিস্তারকে বাধাগ্রস্ত করছে।

ইলিশ গবেষক ও চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান জানান, ‘ইলিশ আছে, কিন্তু ধরা যাচ্ছে না।’

ইলিশ

উৎপাদন কমলেও চাহিদা বেড়েছে

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫.৭১ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয়েছিল। ২০২৩-২৪ এ তা কমে দাঁড়ায় ৫.২৯ লাখ মেট্রিক টনে। অথচ বাজার ও অনলাইনে চাহিদা বেড়েছে।

একইসঙ্গে বেড়েছে মাছ ধরার খরচও। আগে যেখানে ট্রলার ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিলে ১ লাখ টাকায় হয়ে যেত, এখন তা বেড়ে ৪-৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

গবেষকরা বলছেন, মূল মৌসুম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর। যদি পূর্ণিমার সময় আবহাওয়া ভালো থাকে, তবে মাছ ধরা বাড়তে পারে। তখন বাজারে সরবরাহ বাড়লে দুই-তিন দিনের মধ্যেই কেজিতে ৪০০-৫০০ টাকা কমে যেতে পারে ইলিশের দাম।

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার সহকারী পরিচালক মো. ফারুক ময়েদুজ্জামান আশা প্রকাশ করেন, ঘাটে এক কেজির ইলিশের দাম ১৮০০ টাকায় নামতে পারে।

ইলিশ৩

সমস্যাগুলোর সমাধান কি হবে

নাব্যতা সংকট নিরসনে নির্দিষ্ট স্থানগুলো ম্যাপিং করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় উদ্যোগের মাধ্যমে নদী খননের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তারা। তবে বাস্তবায়ন কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

দূষণ, নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ, জাটকা নিধন-এসব রোধেও প্রয়োজন দ্রুত, কার্যকর ব্যবস্থা। নয়তো বাংলাদেশের জিআই পণ্য ইলিশের স্বাভাবিক উৎপাদনব্যবস্থা ও বাজার স্থিতিশীলতা দুটোই থাকবে হুমকির মুখে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা