আনন্দময় হোক শিশুর ছুটির দিনগুলো

সোনিয়া খান: সবার কাছেই ছুটি মানে আনন্দ। কিন্ত শিশুদের কাছে গ্রীষ্মের ছুটি আনন্দের সাথে কিছুটা একঘেয়েমিও নিয়ে আসে। একদিকে তারা যেমন সকাল বেলা আয়েস করে ঘুমিয়ে থাকার স্বাধীনতা পায়, আনন্দ-উল্লাসের অফুরন্ত সময় পায়, অন্যদিকে তাদের বাড়তি অনেক সময় থাকে, যা তাদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। অনেক অভিভাবক এই সময়গুলোকে কিভাবে কাজে লাগাবেন সে সম্পর্কে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এমন কিছুর খোঁজ করেন, যা তাদের সন্তানদেরকে ব্যস্ত এবং খুশি রাখতে পারে। গ্রীষ্মের ছুটি হোক বা অন্য কেনো ছুটির সময় একজন শিশুকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে ব্যস্ত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। লম্বা ছুটির সময়গুলোতে কীভাবে শিশুকে ব্যস্ত রাখবেন চলুন জেনে নেই সেরকম কিছু টিপস।

একসঙ্গে পড়ুন
বই পড়া এমন একটি কাজ যা শিশুদের কল্পনাশক্তি, চিন্তাশক্তি, ভাষা দক্ষতা এবং জ্ঞান বিকাশকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। আপনি যতো ব্যস্তই হোন না কেন একসঙ্গে পড়ার জন্য প্রতিদিন কিছু সময় আলাদা করুন। সেটা ছোট শিশুদের জন্য ছবির বই হোক বা বড়দের জন্য একটা বই। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে এবং গল্প নিয়ে আলোচনা করে তাদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করুন।

খেলতে হবে ঘরের বাইরে 
শিশুদের শারীরিক, মানসিক সুস্থতার জন্য বাড়ির বাইরে মাঠে বা পার্কে খেলতে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পার্কে খেলা, সাইকেল চালানো, সাঁতার শেখা কিংবা প্রকৃতিকে চেনাও একটা সময় কাটানোর পাশাপাশি মানসিক বিকাশের উপায় হতে পারে। আউটডোর খেলা শারীরিক সুস্থতার প্রসার ঘটায়। ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে।

সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখুন 
সৃজনশীল কাজের জন্য সময় আলাদা করুন। ছবি আঁকা, কারুশিল্প, ব্লক বিল্ডিং, শব্দ তৈরির মতো কাজগুলো আপনার সন্তানের সৃজনশীলতা, সূক্ষ্মতা, দক্ষতা বাড়ায়। যেকোন পরিস্থিতিতে যে কোন সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়। তাদের কল্পনাকে উৎসাহিত করুন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করুন।

খাদ্যাভাস পারিবারিক বন্ধন
একটি পরিবার হিসাবে একসঙ্গে খাওয়া শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই গড়ে তোলে না বরং পারিবারিক বন্ধনের একটি সুযোগও তৈরি করে। প্রতিদিন কমপক্ষে একবেলা খাবার সবাই একসঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেখানে সবাই সারাদিনের গল্পগুলি শেয়ার করুন। সবার ভালোমন্দ জানার চেষ্টা করুন। কোন সমসাময়িক বিষয় আলোচনা করুন এবং শিশুদের মতামত জানার চেষ্টা করুন। এই অভ্যাস কিন্তু পরবর্তি জীবন সুন্দর স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে।

শিক্ষামূলক কার্যক্রম
ছুটির দিনগুলোতে সন্তানদের বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষামূলক কাজে নিয়োজিত করুন। ধাঁধা সমাধান করা, শিক্ষামূলক গেম খেলা, বিজ্ঞান পরীক্ষা করা, গাণিতিক দক্ষতা অনুশীলন করা এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এই কাজগুলো শিশুর বয়স এবং আগ্রহ অনুসারে তৈরি করুন। শেখার প্রক্রিয়াটাকে আনন্দদায়ক করতে চেষ্টা করুন। 

কাজ এবং দায়িত্ব দিন
সময় কাটানোর জন্য একটা ভালো পন্থা হলো আপনার সন্তানদের বয়স অনুপাতে উপযুক্ত কাজ এবং বাড়ির কিছু দায়িত্বে নিযুক্ত করে দেয়া। এতে তাদের দায়িত্ববোধ ও জীবন দক্ষতা শেখার সুযোগ তৈরি হবে। সংগঠন, দলবদ্ধ কাজ এবং জবাবদিহিতা এসব বিষয়ে সচেতন হতে শিখবে। তাদের ঘর গোছানো, টেবিল সেট করা বা লন্ড্রিতে সাহায্য করার মতো কাজগুলির দায়িত্ব দিন এবং তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করুন।

নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় জ্ঞান
সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় জ্ঞানের ব্যাপারে সচেতন করুন। আজকাল সব শিশুর স্কুল, কোচিং, বাসায় টিউটর সব মিলিয়েই ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে ছুটির দিনগুলোতে ধর্মীয় ব্যাপারে শিক্ষা দিন। ধর্মীয় বিধি-বিধানের বিষয়ে সচেতন করে তুলুন। ভালো-মন্দ বুঝতে সহায়তা করুন। মানুষের সাথে ভালো আচরণ করা, অন্যকে সহযোগিতা করা, সব প্রাণীর প্রতি দয়া দেখানোর যে শিক্ষা তা শেখান। 

গুণগত সময় কাটান
সবশেষে শুধুমাত্র আপনার সন্তানদের সাথে মানসিক বন্ধনের জন্য মানসম্পন্ন সময় দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। এটি হতে পারে বোর্ড গেম খেলা, পারিবারিকভাবে বেড়াতে যাওয়া, একসাথে ভালো কোন মুভি দেখা বা তাদের প্রিয় শখের সঙ্গে নিজেকে জড়িত থেকে ওদের পাশে থাকা।