ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

প্রাণ ফিরেছে রি তাং ঝর্ণায়, বইছে অবিরাম জলধারা

আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৫৬ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকৃতির স্তব্ধতা ভেঙে প্রায় ১০০ ফুট ওপর থেকে ঝর্ণার পানি আঁছড়ে পড়ছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। আধা কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যাচ্ছে সেই শব্দ। এ যেন ঝর্ণার আওয়াজ নয়, স্বর্গের কোনো অপ্সরী তার নুপুরের রিনিঝিনি শব্দে অপূর্ব নৃত্যগীত পরিবেশন  করছে। 

এটি ওয়াগ্গা দেবতাছড়ি রি তাং ঝর্ণা। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের দেবতাছড়ি দক্ষিণ পাড়ায় এই ঝর্ণা অবস্থিত। অনিন্দ্য সুন্দর ঝর্ণা বর্ষাকালে নবরূপে প্রাণ ফিরে পায়। বর্ষার বিদায়ের পরও শরতের প্রথম মাসে ঝিরিঝিরি শব্দে ওপর থেকে নেমে আসে অবিরাম জলধারা। যে কেউই এই ঝর্ণার সৌন্দর্য অবলোকন করে কল্পলোকে হারিয়ে যেতে পারবেন। ঝর্ণার আশেপাশে সবুজ বন বনানী এবং পাখিদের কলতান মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে

মারমা ভাষায় রি শব্দের অর্থ হলো পানি এবং তাং শব্দের অর্থ হলো উত্তোলন করা। অনেক বছর আগে এই ঝর্ণার পাশে একটি মারমা পাড়া ছিল। মারমা জনগোষ্ঠীরা এই ঝর্ণা হতে পানি তুলত বলে ঝর্ণার নামকরণ রি তাং করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় কারবারি রাজ চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা।

তিনি বলেন, এখন এই ঝর্ণার পাশে আর মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস নেই। প্রায় ৬০ বছর আগে তারা অন্য স্থানে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে। বর্তমানে এই ঝর্ণার পাশে দক্ষিণ দেবতাছড়ি এলাকায় শতাধিক তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের বসবাস। 

দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মদন মোহন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমার ওয়ার্ডের এই ঝর্ণাটি খুব সুন্দর। এখানে প্রচুর সংখ্যায় পর্যটক আসেন। তবে ঝর্ণার কাছে আসার পথ যদি সংস্কার করা হয় তাহলে আরও পর্যটক ঘুরতে আসবেন।

১০ নম্বর ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুণ তালুকদার এবং পাঁচ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরনজীত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ওয়াগ্গা মৌজার মধ্যে এটি একটি বিখ্যাত ঝর্ণা। এই ঝর্ণায় আসার পথগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে অনেক পর্যটক এখানে ঘুরতে আসবেন।
 
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ঝর্ণা দেখতে আসা পর্যটকরা বলেন, প্রকৃতির দেবী অপরূপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে রেখেছে ঝর্ণাটি। এই ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখে আমরা বিমোহিত। 

শনিবার এই ঝর্ণার ট্যুরিজম নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করতে দক্ষিণ দেবতাছড়ি রি তাং ঝর্ণায় যান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন। 

এ সময় তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের একটি নির্দেশনা রয়েছে কমিউনিটি বেইজড পর্যটনকে ত্বরান্বিত করা। তাই আজকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আমি এই ঝর্ণা দেখতে এসেছি এবং এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। যারা প্রকৃতি পছন্দ করেন এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় তারা এই ঝর্ণায় এসে নিরাশ হবেন না। আমি আশা করছি যে, পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই ঝর্ণা সমগ্র বাংলাদেশের পর্যটন প্রিয় মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে।

রাঙ্গামাটি-ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কের দেবতাছড়ি স্টেশনে নেমে সড়কের পূর্ব পাশ ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে এই ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়। অথবা মূল সড়ক থেকে এক কিলোমিটার পথ সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা অন্য কোনো যানবাহন দিয়ে দক্ষিণ দেবতাছড়ি পাড়ায় গিয়ে আধা কিলোমিটার পথ হেঁটেও এই ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়। পথিমধ্যে মহাজন পাড়া, দেবতাছড়ি দক্ষিণ পাড়ার অপূর্ব সৌন্দর্য, স্থানীয় বৌদ্ধ বিহার, সবুজ ক্ষেত, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা এবং দেবতাছড়ি ছড়ার সৌন্দর্য  উপভোগ করতে পারবেন।

SN
আরও পড়ুন