কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: চারদিকে সবুজে ঘেরা মাধবপুর লেক। এর অবস্থান মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে। লেকের স্বচ্ছ পানিতে ভেসে বেড়ায় কচ্ছপ, কাছিম আর মাছ। শাপলা শালুকের উপস্থিতি আর পাখির কলতানে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
‘মাধবপুর লেক’ পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান। লেকের এমন সৌন্দর্যে প্রকৃতিপ্রেমীরা খুঁজে পান অপার শান্তি। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন নিঃসর্গের নিস্তব্ধতা, সৌন্দর্য আর প্রকৃতির ভালোবাসা। যার কারণে এর আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারেন না পর্যটকরা।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মাধবপুর চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে অবস্থিত এই লেক। চা শ্রমিকরা এটিকে 'ড্যাম' বলে অভিহিত করেন। হ্রদের দু-পাশের টিলাগুলোতে চায়ের গাছ। চা-বাগান যেন হ্রদকে দুই পাঁজর দিয়ে আগলে রেখেছে। এটি মূলত মাধবপুর চা-বাগানেরই অংশ। চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে চিরল পাতার ছায়াবৃক্ষ। হ্রদের তীর ঘেঁষে চেনা-অচেনা অনেক ঝোপঝাড়। সেখানে ফুটে আছে হরেক রকমের মায়া লাগা বুনো ফুল।
হ্রদের পাড়ে পাড়ে চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। হ্রদের পাড় ঘেঁষে হাঁটার জন্য চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে সরু পথ। টিলার ওপর আছে তাঁবু। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্তি পেলে এখানে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। শীত মৌসুমে যেকোনো জায়গায় বসা যায়। কিন্তু বর্ষায় হয় তাঁবু, নয়তো সঙ্গের ছাতাটিই ভরসা।

টিলার ওপর থেকে দেখা মেলে বনের নীল রেখা। অনেক দূরে গিয়ে নীল রেখা যেন ছুঁয়েছে আকাশের সীমা! মাধবপুর লেকে একসঙ্গে জল, পাহাড়, চা-বাগান, আর বুনো নির্জনতার আমেজ মেলে। প্রকৃতির এমন মেলবন্ধন কোথায় মেলে।
প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মাধবপুর লেকের আয়তন ৫০ একর। লেকের পাশাপাশি উঁচু উঁচু টিলা। সমতল চা বাগানে গাছের সারি। পাহাড়ি পাখির গান আর নৃত্য ছাড়াও দেখা যায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে তৈরি মায়াবী স্বর্গ।

শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক, শিক্ষার্থীসহ ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামতে শুরু করে। লেকের প্রবেশপথটি শুধু পর্যটকদের জন্য পাকা ও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে হেঁটে লেকটি দেখতে পারেন, সে জন্য লেকের চারপাশে টিলার ওপর উঠতে সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা লেকসিটি থেকে কমলগঞ্জে বেড়াতে যাওয়া আকাশ জামান বলেন, এখানে এসেই প্রশান্তিতে ভরে গেল মন। লেকের শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ, চারপাশে বড় বড় গাছ, চা বাগান সব মিলে এখানকার পরিবেশটাই অন্যরকম। এর আকর্ষণ উপেক্ষা করা কঠিন।

তবে এ বিষয়ে মাধবপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান মুন্না জানান, ‘প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অপার লীলা নিকেতন মাধবপুর লেক দেখতে প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য লোকের ঢল নামে। লেকের কাছে ন্যাশনাল টি কোম্পানির একটি চা বিক্রয় কেন্দ্রও রয়েছে।’

আসবেন কিভাবে আর থাকবেন কোথায়?
মাধবপুর লেকে যেতে হলে ট্রেন বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল অথবা কমলগঞ্জে আসতে হবে। এখানে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতি আছে। তারপর কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমুহনা থেকে মাধবপুর লেক। প্রাইভেট কার বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সেখানে যাওয়া যায়। রাতে থাকতে হলে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। সেখানে থাকা যাবে।
