আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস আজ

বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবসটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ব থেকে যুদ্ধ ও সংঘাত চিরতরে নির্মূল করে শান্তি, মানবতা ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে একটি টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা। এবারের প্রতিপাদ্য যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্বের প্রতি আহ্বান, ‘একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য এখনই পদক্ষেপ নিন’।

১৯৮১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবনায় প্রথম এই দিবস উদযাপিত হয়। শুরুতে সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবার দিনটি নির্ধারিত থাকলেও, ২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০০২ সাল থেকে প্রতিবছরের ২১ সেপ্টেম্বর দিনটিকে স্থায়ীভাবে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দিবসটি উদযাপনের অন্যতম অনন্য অনুষঙ্গ হলো নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘শান্তির ঘণ্টা’ বাজানো ও মহাসচিবের শান্তি বার্তা প্রদান। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংস্থা, শিক্ষাবিদ, শিল্পী ও শান্তিদূতরা এই দিনটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকেন।

এ বছর জাতিসংঘ মহাসচিব তার বার্তায় উল্লেখ করেন ‘আজকের পৃথিবী যুদ্ধ ও সংঘাতে ছিন্নভিন্ন। লাখো মানুষ ঘরহারা, শিশুরা শৈশব হারাচ্ছে, আর মানবিক মর্যাদা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষিত হচ্ছে, মানুষ শরণার্থী হচ্ছে। তারা শুধু শান্তি চায়। শান্তি কোনো একক গোষ্ঠীর বিষয় নয়, এটি সবার দায়িত্ব’।

প্রতিবছর যখন এই দিনে ‘শান্তি’র আহ্বান জানানো হয়, তখন বাস্তব পৃথিবীর করুণ চিত্র ভিন্ন কিছু বলে। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, ইউক্রেন, আফগানিস্তানসহ একাধিক দেশ রক্তাক্ত। সেসব অঞ্চলে প্রতিদিনই নারী-শিশুদের আর্তনাদে কেঁপে উঠছে মানবতা। একদিকে ‘শান্তির দিবস’ উদযাপন, অন্যদিকে বাস্তবে চলছে অব্যাহত সংঘর্ষ এ যেন এক নির্মম বেদনাবোধ।

বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যে শান্তির কথা বলে, সেই তারাই আবার অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থে সংঘাতকে টিকিয়ে রাখে। যুদ্ধ একদিকে মানুষ হত্যা করে, অন্যদিকে মানবতা, নৈতিকতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকেও ধ্বংস করে।

শান্তি কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। এটি হতে হবে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যার ভিত্তি হবে নৈতিকতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়ের চর্চা। শান্তি শিক্ষার মাধ্যমে পরিবার ও সমাজের প্রতিটি স্তরে গেঁথে দিতে হবে। যুদ্ধের বিপরীতে শান্তি একটি বিকল্প নয় এটি অবশ্যকতা।

বর্তমানে পরাশক্তিগুলো সামরিক খাতে প্রতিবছর যে বিপুল অর্থ ব্যয় করে, তার একাংশও যদি শিক্ষা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হতো, তবে পৃথিবীতে আর একজন শিশুও অনাহারে মরত না। যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন অস্ত্র, কিন্তু শান্তির জন্য প্রয়োজন উদারতা, সহানুভূতি, সম্মান ও সম্প্রীতি।

শান্তি কেবল রাষ্ট্রীয় বিষয় নয়, এটি প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। এটি উন্নয়ন, অগ্রগতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বাণিজ্য সব কিছুরই ভিত্তি। শান্তি না থাকলে সব উন্নয়নই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে।

আজকের এই দিনটি যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে ওঠে। শান্তির শ্বেতকপোতের আহ্বান যেন বাস্তবে প্রতিফলিত হয় আমাদের চিন্তা, চর্চা ও কার্যক্রমে। যুদ্ধের দহন নয়, শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বজুড়ে। যুদ্ধ নয়, চাই শান্তি। বিভেদ নয়, চাই একতা। ধ্বংস নয়, চাই মানবতা।