আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

তুমুল সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। দেশটির বিরোধীদলীয় নেতারা জানিয়েছেন, রোববার (১২ অক্টোবর) ফরাসি সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন তিনি।

মাদাগাস্কারের সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি রান্দ্রিয়ানা সোলোনিয়াইকো জানান, সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট ‘ক্যাপসাট’ বিদ্রোহ করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ফরাসি রেডিও আরএফআই জানায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তাকে প্যারিসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

রোববার (১২ অক্টোবর) ক্যাপসাট ইউনিট রাজধানী আন্তানানারিভোর কেন্দ্রীয় স্কয়ারে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। সেনারা জানায়, তারা জনগণের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এরপর তারা নিজেরাই সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ করে।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) সেনাবাহিনীর আরেক অংশ, আধা-সামরিক বাহিনী জেন্ডারমেরি-ও সরকারবিরোধী অবস্থানে যায়। এক অনুষ্ঠানে তারা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের ঘোষণা দেয়, যেখানে সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

সিনেটের সভাপতি পদচ্যুত করে জ্যঁ আন্দ্রে এনরেমাঞ্জারিকে অন্তর্বর্তীকালীন সিনেট প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে এই পদেই দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে জেনারেশন জেড প্রজন্ম। পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদ দিয়ে শুরু হলেও তা দ্রুতই সরকারে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং মৌলিক সেবার অভাবের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

রাজধানীতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২২ বছর বয়সী হোটেল কর্মী আদ্রিয়ানারিভনি ফানোমেগান্তসোয়া বলেন, ‘আমাদের বেতন দিয়ে শুধু খাওয়া-দাওয়া চলে। সরকার ১৬ বছরে কিছুই করেনি, শুধু নিজেদের সম্পদ বাড়িয়েছে। ভুক্তভোগী সবচেয়ে বেশি আমরা, জেন-জি।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার দেশ মাদাগাস্কারে মানুষের গড় বয়স ২০ বছরের নিচে এবং প্রায় ৭৫ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন।

বিশ্বের শীর্ষ ভ্যানিলা উৎপাদক দেশ হলেও মাদাগাস্কারের অর্থনীতি দুর্বল। রপ্তানি খাত যেমন নিকেল, কোবাল্ট, টেক্সটাইল ও চিংড়ি দেশটির বৈদেশিক আয় ও কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হলেও সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতির কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স, এএফপি, আরএফআই