দিনে ১৬০০ ভূমিকম্প, ভয়ংকর কোন সেই দেশ

উত্তর আটলান্টিকের বরফঢাকা দ্বীপ আইসল্যান্ড প্রতিদিনই নড়ে ওঠে। আগ্নেয়গিরি, গেইসার ও ভূ-তাপীয় বিস্ময়ের দেশ হওয়ায় পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় ভূমিকম্পের ঘটনা এখানেই বেশি। তবে প্রশ্ন হলো এক দিনে ১,৬০০ ভূমিকম্প, এটি কি ভয়াবহ সংকেত, নাকি একেবারেই স্বাভাবিক?

২০২৩ সালে এমন একাধিক দিন গেছে, যেদিন আইসল্যান্ডে ২৪ ঘণ্টায় ১,৬০০টির বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে। একই বছর ভিন্ন দিনে ২,২০০-এরও বেশি ভূমিকম্পও নথিভুক্ত করা হয়। কোনো কোনো বছরে দেশটিতে ভূমিকম্পের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ফলে সেখানে ভূমিকম্প যেন জীবনেরই অংশ।

আইসল্যান্ড বসে আছে বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় ভূ-তাত্ত্বিক অঞ্চলের একটি মিড-অ্যাটলান্টিক রিজে। এখান দিয়ে দুটি টেকটোনিক প্লেট উত্তর আমেরিকান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেট ধীরে ধীরে একে অন্যের থেকে সরে যাচ্ছে। এ বিচ্ছিন্নতার ফলেই সৃষ্টি হয় প্রতিদিনের শত শত ক্ষুদ্র কম্পন।

বিজ্ঞানীরা জানান, কোনো অঞ্চলে হঠাৎ করে ভূমিকম্পের ঘনত্ব বেড়ে গেলে সেটি সাধারণত ম্যাগমার নড়াচড়ার লক্ষণ। ম্যাগমা উপরে উঠতে থাকলে আশপাশের শিলায় ফাটল তৈরি হয় এবং ধারাবাহিক ছোট ছোট ভূমিকম্প ঘটে।

২০২৩ সালে দিনে ১,৬০০ ভূমিকম্পের পর রেইকিয়ানেস উপদ্বীপে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।এর মধ্যে চারটি কম্পন ছিল ৪ মাত্রার বেশি। স্থানীয়রা আশঙ্কা করেছিলেন বড় কোনো অগ্ন্যুৎপাত হতে পারে যদিও বড় ক্ষতি হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘনঘন কম্পন ভবিষ্যতে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।

মানুষের প্রস্তুতি ও সহনশীল জীবন, আইসল্যান্ডে ভূমিকম্প আতঙ্কের বিষয় নয় বরং গবেষণার সুযোগ। সেই সাথে ঘরবাড়ি তৈরি হয় ভূমিকম্প-সহনশীল স্থাপত্যে। জরুরি সেবাদল থাকে সতর্ক অবস্থায়। আর পর্যটকরাও নিরাপদে দেখতে পারেন লাভা ফিল্ড, গেইসার, ভূ-তাপীয় লেকসহ নানা বিস্ময়।

দিনে ১,৬০০ ভূমিকম্প শুনতে ভয়ংকর লাগলেও আইসল্যান্ডের জন্য এটি প্রায় স্বাভাবিক। তবে ভূমিকম্পের ঘনত্ব হঠাৎ বেড়ে গেলে তা বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত পৃথিবীর গভীরে কোনো পরিবর্তন ঘটছে, যা ভবিষ্যতে বড় অগ্ন্যুৎপাতের পথও তৈরি করতে পারে।

আইসল্যান্ড তাই আতঙ্কের না হয়ে বরং পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার এক জীবন্ত, চলমান গবেষণাগার।