গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের অবসানে আলোচিত নতুন পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি সূত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে প্রস্তাবিত ২০ দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাটি শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তবে পোস্টে সরাসরি যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ না করলেও, তার সরকারের একজন মুখপাত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। তার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত জিম্মিদের মুক্তি ও নিহতদের মরদেহ ফেরত আনা হবে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপস্থিতিতে প্রথমবারের মতো এ পরিকল্পনার ঘোষণা আসে। সেখানে ইসরায়েল, হামাস, কাতার ও মিসরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
৩ অক্টোবর হামাস প্রস্তাবে প্রাথমিক সম্মতি জানালে ৪ অক্টোবর ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানান ট্রাম্প। এরপর ৬ অক্টোবর মিসরের শারম আল শেখ শহরে শুরু হয় চূড়ান্ত আলোচনা, যা চলে দুই দিন। ৮ অক্টোবর রাতে ইসরায়েল ও হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রাথমিক বাস্তবায়ন বিষয়ে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
ট্রাম্প ৯ অক্টোবর নিজ এক্সবার্তায় উভয় পক্ষের স্বাক্ষরের খবর প্রকাশ করেন। ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর, ১০ অক্টোবর ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। ইসরায়েলের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
এর প্রতিক্রিয়ায় ৮ অক্টোবর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। এখন পর্যন্ত চলমান হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ।
ইসরায়েলের দেওয়া তথ্যমতে, গাজায় এখনও ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত।
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করা হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘদিন ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জর্জরিত অঞ্চলটিতে স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের উদ্যোগে গাজা যুদ্ধের অবসান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
গাজা উপত্যকায় ১ বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে এবার আশার আলো দেখছে বিশ্ব। ট্রাম্পের প্রস্তাবে ইসরায়েলের সম্মতি ও হামাসের সাড়ায় অবশেষে যুদ্ধবিরতির পথে এগোচ্ছে গাজা। এখন শুধু অপেক্ষা ২৪ ঘণ্টার যেখানে থেমে যেতে পারে সহিংসতার ভয়াল ছায়া।