বন্দি বিনিময়ের পরপরই কিয়েভে রাশিয়ার ড্রোন হামলা

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শনিবার (২৪ মে) ভোরে চালানো হামলায় শহরটির বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগে এবং বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত আটজন বলে জানিয়েছেন কিয়েভের মেয়র। দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটল। 

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় গুরুতর আহত দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানান, সোলোমিনস্কি জেলায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সর্বোচ্চ তলায় আঘাত হানে একটি ড্রোন। এর পর ওই অ্যাপার্টমেন্ট ও পাশের একটি অনাবাসিক ভবনেও আগুন ধরে যায়। কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর কাচেঙ্কো জানান, ডনিপ্রোভস্কি জেলায়ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের দুটি তলায় আগুন ধরে যায়। হামলার দুই ঘণ্টার বেশি সময় পরও কিয়েভে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজতে শোনা গেছে। 

ওডেসা অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ কিপার জানান, শুক্রবার দুপুরে রাশিয়া অঞ্চলটির বন্দর অবকাঠামোয় দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে একজন নিহত ও আটজন আহত হন। শুক্রবার রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের রাকিভকা নামের একটি গ্রাম দখল করেছে।

বিগত কয়েক দিনে মস্কোসহ রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের প্রায় ৮০০টি ড্রোন হামলার পর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ জবাব এলো। এর আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভ শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব হামলার ‘প্রত্যুত্তর’ অবশ্যই দেওয়া হবে।

এর আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শুরু হয় বন্দি বিনিময়। প্রথম ধাপে দু’দেশ একসঙ্গে ৩৯০ জন করে বন্দি বিনিময় করেছে, যা ছিল যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ার সূচনা। শুক্রবার (২৩ মে) পর্যন্ত দু’পক্ষ ২৭০ সেনা ও ১২০ জন করে বেসামরিক নাগরিক মুক্ত করে। ধাপে ধাপে আরও বন্দিদের মুক্ত করা হবে। 

গত সপ্তাহে তিন বছরের মধ্যে প্রথমবার মুখোমুখি আলোচনায় বসেছিল দু’পক্ষ। যদিও যুদ্ধবিরতিতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য থাকলেও তা হয়নি। বন্দি বিনিময়ের চুক্তিই ছিল ওই বৈঠকের একমাত্র কার্যকর অগ্রগতি। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ ১ হাজার জনের বেশি বন্দির মুক্তি দেবে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, মুক্তিপ্রাপ্ত রুশ নাগরিকদের বর্তমানে ইউক্রেনের প্রতিবেশী বেলারুশে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর পর তাদের রাশিয়ায় ফেরত নেওয়া হবে। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে কিছু বেসামরিক নাগরিক আছেন, যারা কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় অনুপ্রবেশের সময় আটক হয়েছিলেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মুক্তিপ্রাপ্তদের ছবি প্রকাশ করেছেন। ছবিতে দেখা গেছে, মাথা ন্যাড়া করা বন্দিরা উচ্ছ্বসিতভাবে ইউক্রেনের জাতীয় পতাকা নিয়ে স্বাধীনতা উদযাপন করছেন।

দু’পক্ষের বন্দি বিনিময় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ‘উভয় পক্ষকে অভিনন্দন। এটি কী বড় কিছুর সূচনা হতে পারে?’ বলে প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, শান্তি প্রক্রিয়া আটকে গেলে তিনি রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন।