ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। ১৯ দশমিক দৈর্ঘ্যের ৭৩ কিলোমিটারের এই প্রকল্পটির প্রথম মাস থেকে এই পর্যন্ত কত কোটি টাকা আয় করেছে শুনলে রীতিমতো চমকে যাওয়ার মতো অবস্থা। গত বছর ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সেই সময় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে যানবাহনগুলোকে সর্বনিম্ন ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত টোল নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনের পর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ছয় মাসে কত টাকা টোল আদায় হয়েছে? এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) খবর সংযোগকে জানায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর প্রথম মাস সেপ্টেম্বরে ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৭টি গাড়ি ব্যবহার করেছে। এতে আয় হয় ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে আয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর আগের মাসে (জানুয়ারি) ১১ লাখের বেশি যানবাহন থেকে ৯ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১০ লাখ যানবাহন থেকে পৌনে ৯ কোটি টাকা টোল আদায় হয়। নভেম্বরে ৮ লাখের বেশি যানবাহন থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়। উদ্বোধনের পরের মাস অক্টোবরে সোয়া ৯ লাখ যানবাহন থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়।
এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার খবর সংযোগকে জানান, কাওলা থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত পুরো এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে যানবাহন চলাচলের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা পূরণ হবে। তখন ৮০ হাজারের বেশি যানবাহন প্রতিদিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে চলাচল করবে। এখন যেভাবে যানবাহন চলছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা আশাব্যঞ্জক।
অবশ্য এখনও পুরো পথ চালু না হওয়ায় যানবাহন চলাচল কম বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কর্তৃপক্ষ ও বিনিয়োগকারীরা বলছেন, আংশিক চালু হলেও দিনে যদি ৫০ হাজারের বেশি যানবাহন চলত, তাহলে কাঙ্ক্ষিত আয় পাওয়া যেত। এফডিইই বলছে, শুরুতে সর্বনিম্ন টোল ১৫০ টাকা ধরা হয়েছিল। সরকার আপত্তি করায় তারা সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা করেছেন। টোল বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
২৫ বছর পর বাংলাদেশ সরকারের কাছে উড়ালসড়কটি হস্তান্তর করবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। তবে এর আগে তারা টোল আদায় করে বিনিয়োগ করা অর্থ সুদসহ তুলে নেবে। বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি অনুসারে উড়ালসড়ক দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে ধারণা করা হয়। আর সর্বনিম্ন যানবাহন চলাচল করতে পারে সাড়ে ১৩ হাজার। ৮০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করলে বাড়তি যে টোল আদায় হবে, এর ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে।
বিনিয়োগ, নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে-থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি, চীনের শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ও সিনো হাইড্রো করপোরেশন। এতে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানির মালিকানা ৫১ শতাংশ। শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের মালিকানা ৩৪ শতাংশ। সিনো হাইড্রো করপোরেশনের মালিকানা ১৫ শতাংশ। আর ২৭ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার, যা ভায়াবিলিটি গ্যাপ (ভিজিএফ) নামে পরিচিত।
