ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা খেলো হজ এজেন্সি

আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ০৫:১৯ পিএম

মেরুদণ্ড ক্ষয় হওয়া রোগী সামছুন নাহার। ডাক্তার বলেছেন অপারেশনের জন্য। কিন্তু, অপারেশন করলে প্যারালাইসিস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তিনি স্বামীর সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলেন, যে টাকায় অপারেশন করবেন সেই টাকা দিয়ে হজে যাবেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করে জমজমের পানি পান করার।

অসুস্থতার কথা শুনে আত্মীয়-স্বজন যে অর্থ সাহায্য করেছিল, সেই টাকাগুলো মাটির ব্যাংকে জমিয়ে দুই বছর আগে দ্বারস্থ হন রাজধানীর কুড়িলে অবস্থিত 'সাজিদ হজ ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস' (যার লাইসেন্স নং ১১৫২) নামক একটি এজেন্সির। ২০২৩ সালে হজ করার জন্য এজেন্সির চাহিদা মতো তিলে তিলে জমানো ৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা তাদের এজেন্সির নামে করা ব্যাংক হিসাবে জমা দেন। কিন্তু হজের সময় চলে আসলে এজেন্সি শুরু করে কালক্ষেপণ ও বাহানা। টাকা ফেরত চেয়েও তা পাওয়া যায়নি। দুই বছর অপেক্ষা করেও পূরণ হয়নি হজ করার স্বপ্ন।

শুধু সামছুন নাহার নন, 'সাজিদ হজ ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস' এর মালিক ওয়াহিদুল আলম ভূঁইয়া এবং তার ছেলে সাজিদুর রহমান ভূঁইয়ার কাছ থেকে হজে পাঠানোর নাম করে  টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার শিকার হয়েছেন ৪৪ জন হজ্ব যাত্রী। তাদের সকলের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

রোববার (২৬ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলানায়তনে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা। ২০২৩ সালে হজ করার জন্য তারা এই এজেন্সিতে যান। তখন এজেন্সির পক্ষ থেকে বলা হয় যে, হজের জন্য সরকার নির্ধারিত ৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা জমা করতে হবে। তখন তারা এজেন্সির নামে থাকা ব্যাংক হিসাব নম্বরে সব টাকা জমা দেন। কিন্তু টাকা জমা করার পর চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে গড়িমসি শুরু হয়। বারবার তাগিদ দেয়ার পরও চূড়ান্ত নিবন্ধন না করে হজের এক মাস আগে পাসপোর্ট আটকে এজেন্সির অফিস বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান মালিক ও তার ছেলে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, হাব এবং হাজী ক্যাম্পে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেশ করা হয়। এসবের মধ্যে হজের সময় চলে যাওয়ায় সেই বছর তারা কেউই আর হজে যেতে পারেন নি। 

তারা আরও জানান, হজের শেষে তাদের সাথে প্রতারণা এবং টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়ে এজেন্সির মালিক ওয়াহিদুল আলম ভূইয়া এবং তার ছেলে সাজিদুর রহমান ভুঁইয়ার নামে খিলক্ষেত থানায় ৮টি মামলা এবং ঢাকার বাইরে আরও ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে র‌্যাব গ্রেফতার করলে প্রায় ৬ মাস জেল খাটার পর হজে নেয়ার শর্তে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হলফনামা দেন তারা। ২০২৪ সালে আবারও নিবন্ধন করবেন এবং হজে না পাঠাতে পারলে এক বছরের জরিমানাসহ সব টাকা ফেরত দিবেন- এমন প্রতিশ্রুতি দেন। 

কিন্তু কারাগার থেকে বের হওয়ার পর আবার আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এ বছরও হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যায়। 

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী বেলায়াত হোসেন বলেন, আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। আমার অবসরের টাকা কোনো কাজে না লাগিয়ে স্বপ্নে দেখেছিলাম হজে যাবো। শেষ সম্বল এই টাকাগুলো তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে যে টাকাগুলো আত্মসাৎ করা হবে জানতাম না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমাদের এখন শেষ আশ্রয়স্থল প্রধানমন্ত্রী। তিনি আমাদের মা। আমরা চাই আমাদের অসহায় মানুষদের কথা চিন্তা করে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবেন।

RY/AST
আরও পড়ুন