রাজধানীর যানজট কমাতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তার কোনোটাই কাজে লাগছে না। এমন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বিশ্বের ভিতরে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে। যেমন বায়ুমানে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই তার প্রথম স্থানটি ধরে রেখেছে। এরপর রয়েছে পরিবেশ দূষণ, গাড়ির ইচ্ছেমতো হর্ন যা মারাত্মক শব্দদূষণ সৃষ্টি করছে। এসব ছাড়িয়ে নগরবাসীর বড় অস্বস্তি ‘’অসহনীয় যানজট। সেই যানজট কমাতে সরকার এবার এক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। যার বাস্তবায়নে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এমনটিই জানালেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীপদমর্যাদা) শেখ মইনউদ্দিন।
সূত্রের খবর, সরকার রাজধানী উন্নয়নের এক মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। রাজধানী শহরের অসহনীয় যানজটমুক্ত করতে ২২টি ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ভিতরে সিটির বাস চলাচল শৃঙ্খলার ভিতরে আনার জন্য নিমতলীতে সিটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এজন্য সরকারের মোট ৯ সুপারিশ ও মতামত রয়েছে।
প্রথম হাইকোর্ট মোড় থেকে উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত পাইলট করিডোরে ২২টি ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনের চিন্তাভাবনা। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এ ছাড়া রাজধানীর নিমতলী ও আনন্দবাজারে রেলওয়ের দখল করা জমি মুক্ত করে নিমতলীতে সিটি বাস টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। পাশাপাশি মেট্রোরেল ও ঢাকা মহানগরীর বাস সার্ভিসে কিউআর কোড ভিত্তিক টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত হাতে নিয়েছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে হোম গ্রোন ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনে কাজ ত্বরান্বিত করতে এই নির্দেশনা ও মতামত দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সিটি বাস সার্ভিস পরিষেবার মানোন্নয়ন ও যাত্রী সেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে সরকারি-বেসরকারি বাস অপারেটরদের টিকিট হতে প্রাপ্ত রাজস্ব ঝুঁকির দায়দায়িত্ব সরকারের গ্রহণ করার বিষয়ে মতামত প্রদান করা হয়।
এছাড়া তেজগাঁওয়ে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ে তাগিদ প্রদান করা হয় এবং প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন পর্যায়ের সময়টুকুতে ট্রাক রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে নির্মাণের উপর তাগিদ দেওয়া হয়। ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশেনের।
এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিমতলী ও আনন্দবাজারের দখলকৃত জমি দখলমুক্ত করে নিমতলীতে সিটি বাস টার্মিনাল গড়ে তোলার বিষয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়নে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। এতে আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সহযোগিতা প্রদানের জন্যও অনুরোধ জানানো হয়।
অপরদিকে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান উড়ালসড়ক (পূর্বনাম মেয়র মোহম্মদ হানিফফ্লাইওভার), মহাখালী উড়ালসড়ক ও তেজগাঁও উড়াল সড়কে যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন ও যানজটমুক্ত রাখতে সুষ্ঠু সমন্বয় ও ট্রাফিকের চলাচল কার্যক্রম গ্রহণে বিআরটিএ, ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি), সিটি কর্পোরেশন এবং বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ঢাকা মহানগরীর সড়কে যানবাহন চলাচলের চাপ কমাতে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়। ডিটিসিএ কর্তৃক প্রস্তুত, কিউআর কোর্ড ভিত্তিক টিকেটিং সিস্টেম মেট্রোরেল এবং বাস সার্ভিসে চালুকরণ বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) শেখ মইনউদ্দিন ও সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়-কে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে আইসিটি মন্ত্রণালয়, ফিনটেক কোম্পানি হতে সদস্য রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

গত ৭এপ্রিল ডিটিসিএ ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার কে এম তৌফিকুল হাসান লিখিত নির্দেশনায় এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, সবাইকে নিজ দপ্তর, সংস্থা বা সংগঠনের জন্য কাজ না করে সরকার ও দেশের পক্ষে এক যোগে কাজ করার কথা ভাবতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন হবে বলে তিনি আশা করেন।
রাজধানীর ২২টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রযুক্তি তৈরি করেছে বুয়েট। শিক্ষা ভবন সংলগ্ন হাইকোর্ট মোড় থেকে ফার্মগেট-মহাখালী হয়ে উত্তরার আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কে এ বাতি স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, সোনারগাঁও ও ফার্মগেট মোড়ে বসবে উন্নতমানের এসব ট্রাফিক সিগন্যাল। ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে গত অক্টোবরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর সিদ্ধান্ত দেয়। এটি একটি পাইলট প্রকল্প। ছয় মাস পর্যবেক্ষণ শেষে এর সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে ডিটিসিএ প্রকল্পের তদারকি করছে। পরামর্শক হিসেবে আছে বুয়েট। সিটি করপোরেশন হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ। আর প্রয়োগ করবে পুলিশ।
ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি পাইলট প্রকল্পের পরামর্শক দলে থাকা বুয়েটের অধ্যাপক হাদী উজ্জামান বলেন, চারটি ইন্টার সেকশনে স্থাপন করা হবে প্রথমে। সিটি করপোরেশনে ডিজাইন দিয়েছি। এরপর করপোরেশন ঠিকাদার নিয়োগ দেবে। পূর্তকাজ ও সিগন্যালিংয়ের কাজ আছে। ধারণা করছি, তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা কাজটি সারতে পারবে। দেশীয় পদ্ধতিতে সিগন্যালিং ও বাতির ব্যাপারে আমাদের সরকার প্রধানের একটি নির্দেশনা আছে। সেভাবেই কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে চারটি ইন্টারসেকশন পাইলটিংয়ের কাজ চালু করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, বাংলামোটর, সোনারগাঁও এবং ফার্মগেট এই চার জায়গায় ট্রাফিক সিগন্যালিংয়ের পাইলটিং কাজ শুরু হবে। ট্রাফিক সিগন্যালে স্থানীয় প্রযুক্তিতে কন্ট্রোলার এবং বাতি তৈরি করা হবে। প্রতিটি মোড়ে পুলিশ বক্সের মতো হবে, এর দোতলায় থাকবে ওয়াচ টাওয়ার। সেখানে কন্ট্রোলার এবং দুজন অপারেটর থাকবেন। তারা ট্রাফিক দেখে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এটা অটোমেটিক ও ম্যানুয়ালি দুভাবে অপারেট করা যাবে। প্রথমে এটা পাইলটিং করে দেখা হবে, তারপর সফলতা পেলে পুরো ইন্টারসেকশনে এটা করা হবে। একাজের খরচ জানা যায়নি। তবে কন্ট্রোলার, বাতিগুলো বুয়েট তৈরি করবে, তাতে আনুমানিক ১২-১৪ লাখ টাকা লাগবে প্রতি ইন্টারসেকশনের জন্য।
এদিকে ঢাকা মহানগরীর সড়কে যানবাহন চলাচলের চাপ কমাতে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
