উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। ধান-চাল, শাক-সবজি এবং আম এর পাশাপাশি পশু পালনেও যথেষ্ট সমৃদ্ধ এই জেলা। কুরবানীর ঈদ সহ প্রায় সারা বছরই দেশের বিভিন্ন জেলায় গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন পশু সরবরাহ করেন এখানকার খামারিরা। কিন্তু খাদ্যের দাম লাগামহীন বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। দাম বৃদ্ধির কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে খামার। এইরকমভাবে চলতে থাকলে পশুখামার চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ৬৮ হাজার ৯৩৭ টি পশুর খামার রয়েছে। যার মধ্যে দুগ্ধ গরুর খামার রয়েছে ২৭হাজার ১৮৯, হৃষ্টপুষ্টকরন গরু রয়েছে ১৪ হাজার ৮১০, ছাগলের খামার রয়েছে ২৩ হাজার ৫৬৯, ভেড়ার খামার রয়েছে ৩ হাজার ১২১ এবং ২৪৭ মহিষের খামার আছে। যা থেকে জেলার দুধ এবং মাংসের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অংশ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে বলে জানায় অধিদপ্তর।
সদর উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার খামারি শামীম কবির দৈনিক খবর সংযোগ কে বলেন, ৯ বছর আগে গরুর খামার করেছি। শুরুর দিকে খামারে ৬৫ থেকে ৭০টার মতো গরু ছিল। গত কয়েক বছর থেকে আমার খামারের গরু কমতে কমতে এখন মাত্র ৩৮ টি রয়েছে। ৫ বছর আগে দানাদার খাদ্য যে দামে কিনেছি, এখন সেই খাবারের দাম হয়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি।

তিনি আরও বলেন, আগে মাংসের দাম, দুধের দাম যেমন ছিল তেমনি আছে। মাঝে থেকে খাবারের দামটা বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। খাবারের দাম যে পরিমাণে বেড়েছে তাতে খামারিদের এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার যেভাবে টিসিবির মাধ্যমে কম মূল্যে খাবার বিতরণ করছে, এভাবে যদি পশু খামারিদের কম মূল্যে খাবার বিতরণ করে তাহলে খামারিরা উপকৃত হতো। খামারিরা আরও অনেক বেশি প্রাণি লালন-পালন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো।
জেলার বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার এসোসিয়েশনের সভাপতি একিউএম ওয়াজেদুল ইসলাম খান দৈনিক খবর সংযোগ কে বলেন, গত কয়েক বছর থেকে গোখাদ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। চলতি বছরেও বেড়েছে কয়েক দফা। এখন খাদ্যের দামের যে অবস্থা আমাদের খামার রক্ষা করাই দায় হয়ে পড়েছে। দুধ বা মাংসের দামের সাথে খাদ্যের দাম কোনভাবেই মিলছে না। খাবারের দাম বেড়েছে, কিন্তু বাড়েনি দুধ ও মাংসের দাম।
তিনি আরও বলেন, লাগামহীন ঘোড়ার মতো দৌঁড়াচ্ছে খাবারের দাম। আর আমরা সিন্ডিকেট-সিন্ডিকেট করি। সিন্ডিকেট তো সরকার জানে কে সিন্ডিকেট করছে। সরকারিভাবে এটাকে প্রতিহত না করা হলে আমরা পারব না। সরকার যদি ইচ্ছে করে যেকোনো মুহূর্তে এই সিন্ডিকেটকে ধরতে পারে। সিন্ডিকেট ব্যবসা আমাদের দেশের জন্য অচল। আমরা আমদানি নির্ভর সবকিছুতেই হতে চাই। একটা চক্রান্ত চলছে আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ও মাঝে মধ্যে বলেছেন প্রয়োজন হলে মাংস আমদানি করব। উনি কি তলিয়ে দেখেননা গো-খাদ্যের দাম কিভাবে বাড়ছে। আজকে যখন ভারত আমাদের দেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দিল তখন কিন্তু কুরবানীর গরুর জন্য আর ভারতের মুখাপেক্ষী হতে হয়নি। সরকার যেভাবে টিসিবি বা ওএমএস এর মাধ্যমে মানুষের খাবার সরবরাহ করছে খামারিদের সেইভাবে টিসিবির মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করা হলে খাবারের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতো।
পৌর আঁটাপট্টি এলাকার পশু খাদ্যের দোকানি ও নারিশ ফিড এর ডিলার আলহাজ্ব বজলুর রহমান দৈনিক খবর সংযোগ কে বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর পশুর খাবারের দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। আগে যে ভুট্টা ছিলো ১০-১২ টাকা সেইটা এখন ৩০-৩২ টাকা, ব্যান্ড ছিল ১০-১৫ টাকা হয়ে গেছে ৪০-৪২ টাকা, গম ছিলো ২০-২৫ সেটা ৪০-৫০ টাকা। বলা যায়, সব ধরনের গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবু তালেব প্রামানিক দৈনিক খবর সংযোগ কে বলেন, গবাদি পশু যেগুলো রয়েছে তাদের উন্নত মানের পুষ্টি সম্পন্ন খাবার দিতেই হয়। একটি গাভীর দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে খড় বা কাঁচা ঘাসের পাশাপাশি দানাদার খাবার দিতে হয়। দুধ তৈরির উপাদানগুলো দানাদার খাদ্য থেকে আসে। সেক্ষেত্রে বর্তমান বাজারের প্রেক্ষাপটে দানাদার খাদ্যের দাম কমে আসা দুরূহ। কারণ ইমপোর্টেড প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে ডলারের মূল্যটা অনেক বেশি।
আমাদের উৎপাদিত পণ্য দ্বারা গরুর খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়না। সেক্ষেত্রে খাবারের দাম কমানো মুশকিল। এক্ষেত্রে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি ঘাস চাষের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ ঘাস হলো গরুর এক নম্বর খাদ্য। বাইরের তৈরি খাবারের পরিবর্তে সবুজ ঘাস বেশি পরিমাণ খাওয়াতে হবে। ঘাস যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ দেওয়া যায় তাহলে দানাদার খাবার কম লাগবে। এভাবে খামারের উৎপাদন খরচ কমে যাবে।
