জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে ভোলা একটি। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ২০টি চরের চারদিকে পানি থাকলেও সংকট রয়েছে সুপেয় পানির। লোনা পানিতে চরের মানুষের জীবনটাই যেন লবনাক্ত হয়ে গেছে।
পানি যখন সুপেয় না হয়, তখন তা হয়ে ওঠে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যাসহ মরণের কারণ। এখানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে প্রায়ই জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে ডুবে যায় বিস্তীর্ণ জনপদ। কমে গেছে সুপেয় পানির উৎস, বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ।
যদিও পানির সংকট বর্তমানে একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ক্রমান্বয়ে এই সংকট আরও তীব্র হচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই সংকট ছড়িয়ে পড়ছে। এখানে বসবাস করেন অন্তত ১ লাখেরও বেশি নারী-পুরুষ ও শিশু। সেখানে অধিকাংশ পুরুষের পেশা কৃষিকাজ ও মাছ ধরা। জলবায়ুর প্রভাবে চরাঞ্চলে সুপেয় পানির উৎস কমে যাওয়ায় সেখানে বসবাসকারীরা অনিরাপদ পানি পান ও ব্যবহারের ফলে রয়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
চলমান শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। চরফ্যাশন উপজেলার চর ফকিরা, চর লিউনিল, চর নিজাম, পূর্ব ঢালচর, ঢালচর, চর পাতিলা, কুকরি মুকরি; চর মোতাহার, চর শাহাজালাল, চররিরউলিন, সিকদারচর চর মিজান, চর পিয়াল চরহাসিনা, চর মনোহর, পূর্ব চর বিশ্বাস, চর আশ্ররাফ আলম, কালকিনিসহ উপজেলার ২০টি চরে সুপেয় পানির অভাবে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন চরের নারী-শিশুরা। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নেই কার্যকরী কোনো উদ্যোগ।
সরেজমিনে চরফ্যাশন উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছি উপজেলার মজিব নগর ইউনিয়নের চর সিকদারের চরে গিয়ে দেখা গেছে, দ্বীপের মধ্যে যেন আরেক দ্বীপ, চারদিকে জলরাশির মাঝে একখণ্ড সবুজ। এখানে নেই কোনো রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট, সাঁকো। কৃষক ও জেলে পেশার মানুষের বসবাস সেখানে। খাল-বিল আর ক্ষেতের সরু আইল দিয়ে চলাচল করতে হয়।
কখনও কখনও কাঁচা রাস্তা দেখা গেলেও বর্ষায় হাটু পরিমাণ পানি থাকে। জমিতে অন্য ফসলের চাষাবাদ না হলেও আমন ধান চাষ হয় প্রতি বছর। চরের ভেতরের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। চরের ৩শত ঘরে বসবাস করেন প্রায় ২ হাজার মানুষ। এসব মানুষের সুপেয় পানির জন্য রয়েছে মাত্র ৬টি গভীর নলকূপ। এরমধ্যে ৩টি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে গত ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বাকি ৩টির মধ্যে দু-একটি প্রায় নষ্ট।

উপজেলার দক্ষিণের বিছিন্ন দ্বীপচর ঢালচর ইউনিয়নের সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল সালাম হাওলাদারের বলেন, ঢালচরে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বসবাস। এ ইউনিয়নের চারিদিকে নদী ও বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানিতে ঘেরা। এখানে গভীর নলকূপ ছাড়া নিরাপদ পানি পাওয়া যায় না। ঢালচরে জনসংখ্যার অনুপাতে টিউবওয়েলের সংখ্যা কম।

তিনি আরও বলেন, এখানে টিউবওয়েল প্রয়োজন। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের মোহনা সংলগ্ন হওয়ায় প্রায়ই তলিয়ে যায় ঢালচর। এ সময় তীব্র সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয়। এতে ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও জন্ডিস ও চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষ। চরবাসী যেকোনো অসুখে চিকিৎসার জন্য ছুটে যান হাতের কাছের কবিরাজ ও হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে।
এতে হিতে বিপরীত হচ্ছে। একদিকে তাদের অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে ট্রলারযোগে যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে কবিরাজের চিকিৎসা নেন বলে জানান তারা। তবে দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
