ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সংকটে বান্দরবান সদর হাসপাতাল

আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০১:০৭ পিএম

বান্দরবান সদরের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় বিভিন্ন উপজেলা ও দুর্গম এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র রোগীরা সেবা নিতে আসে এই সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে চিকিৎসক সংকটসহ নানা অপরিচ্ছন্নতা ও অপব্যবস্থানায় জর্জরিত হাসপাতালটি।

১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও কম জনবল ও চিকিৎসক সংকট নিয়ে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। যার ফলে বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি নানা ভোগান্তি পড়ার অভিযোগ করেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। তা ছাড়া চিকিৎসক সংকটসহ অব্যবস্থাপনা জর্জরিত বান্দরবানের একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি।

জানা গেছে, সরকারি এই হাসপাতালে শুধু চিকিৎসক সংকট নয় রয়েছে নানা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিরও অভাব। বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আসলেও দীর্ঘ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে আলট্রাসনোগ্রাফি। রোগীরা বিনামূল্যে ঔষধ নিতে গেলেও ঠিক মত মিলছে না এই হাসপাতালে। এ ছাড়াও হাসপাতালে বাথরুম অপরিচ্ছন্নতা, ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ রোগীরা।  হাসপাতালটিতে বেশির ভাগই নার্সিং শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তবে নাই তাদের কোন অভিজ্ঞতা। সিনিয়র অভিজ্ঞতা নার্সরা কাজ থেকে রেহাই পেতে দেখাচ্ছেন নানা অজুহাত। পুরো হাসপাতালজুড়ে এখন ময়লা পরিবেশ ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষকে দায় দিচ্ছেন রোগীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একমাত্র সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় বিভিন্ন উপজেলা ও দুর্গম এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র রোগীরা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু ডাক্তার দেখাতে রোগীদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘণ্টা। তবুও দেখা মিলে না সেসব রোগের চিকিৎসকদের। ফলে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে দ্বিগুণ টাকা খরচ করে নিতে হচ্ছে সেবা। অপরদিকে পুরুষ-মহিলা ওয়ার্ডের বাথরুম অবস্থাও পুরাই নাজেহাল। ময়লা- আবর্জনা দুর্গন্ধে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালে রোগী ঘুমানো বেডের চিত্র একই। ময়লা ভরা নিয়ে একের পর এক বেডে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিচ্ছন কর্মী থাকলেও তারা আছে রাজকীয়ভাবে। কোন কিছু বলতে গেলে রাগান্বীত হয়ে উঠে। বিছানা না পেয়ে ফ্লোরে নিতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এদিকে পানি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়েও ভোগান্তি রয়েছে হাসপাতালে। শুধু তাই নয় প্রয়োজনীয় মত ঔষধ ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়েও নানা সমস্যা সম্মুখীন পড়তে হচ্ছে রোগীদের। সেসব দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত সমাধান করে সঠিক সেবার মান নিশ্চিত করার দাবি সকলের।

চিকিৎসা নিয়ে রহমত ও রহিমা আকতার সহ বেশ কয়েকজন রোগীরা বলেন, এই হাসপাতালে সবকিছু সমস্যা। সময় মত পানি আসে না, বিদ্যু গেলে আর আসার নাম নাই। বাথরুম অবস্থা পুরাই দুর্গন্ধে ভরপুর। একটা রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসি যাওয়ার বেলায় দুই-তিনটা রোগ নিয়ে যেতে হয়! আর প্রয়োজনীয় ঔষুধ নিতে গেলে দুই একটি ছাড়া অন্যান্য ঔষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। রোগে পরীক্ষা -নিরীক্ষা জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসক নাই। এভাবে হলে মানুষ চিকিৎসা নিতে এসে মারা যাবে। তাই দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

সিভিল সার্জনের তথ্য মতে, বান্দরবান এই সরকারি হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মধ্যে চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ১২ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন ৪ জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট ২৭ জনের মধ্যে রয়েছে ৬ জন, মেডিকেল অফিসার প্রায় ৫০ জনের মধ্যে ১১ জন রয়েছেন। এছাড়াও মেডিকেল টেকনোলজি ২২ জন, ফার্মাসিস্ট ৩ জন, হেলথ এডুকেটর ২ জন, নার্স ৬৮ জন, ৩য় শ্রেণি ১০ জন, তাছাড়া ৪র্থ শ্রেণি ২০ জন থাকার কথা থাকলেও সব মিলে রয়েছে মাত্র ১৫ জন। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয় রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা, আলীদকম, নাইক্ষ্যংছড়ি এই ৬টি উপজেলাতে একই অবস্থা । জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনা রয়েছে প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে।

জেলা সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, অব্যবস্থাপনা যেটা সেটি পুরো দেশে প্রতিটি হাসপাতালে থাকে। আর আমাদের কাছে যখন কোন অব্যবস্থাপনা অভিযোগ আসে তখন চেষ্টা করি দ্রুত সমাধান করতে বা কি কারণে এই অব্যবস্থাপনা হচ্ছে সেটি খুঁজে বের করে সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছি।

AHA/FI
আরও পড়ুন