ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

এখনও নোয়াখালীতে পানিবন্দি ১২ লাখ মানুষ

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম

এ বছরের বন্যায় বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নোয়াখালী। জলাবদ্ধতায় এখনো পানিবন্দি  প্রায় ১২ লাখ মানুষ। দীর্ঘ হচ্ছে পরিস্থিতি। এ জন্য খাল দখল, খালের ওপর বহুতল ভবন, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র কালভার্ট, বাঁধ নির্মাণকে দায়ী  করে দ্রুত এর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

সরজমিনে দেখা গেছে, জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও এখনও বাড়ির উঠোনে রয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু পরিমাণ, কোথাও এর চেয়ে বেশি।

জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর ফেনী থেকে নেমে আসা পানি উজানের প্রবেশ করায় নোয়াখালীর আট উপজেলা প্লাবিত হয়। এরই মধ্যে টানা বর্ষনে প্রতিটি বাড়ির উঠান ও সড়ক চার ফুট পানির নিচে ডুবে যায়। বন্যা কবলিত লোকজন বসত ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বহুতল ভবনের বাসায় ও পার্শ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। এখনও অনেকে সংখ্যক লোক স্বজনদের বাড়িতে রয়েছেন।

প্লাবিত এলাকাগুলোর মধ্যে জেলা সদর, কবিরহাট, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলা রয়েছে। কিন্তু বন্যার দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনও পানিবন্দি চৌমুহনী পৌরসভার বেশির ভাগ ওয়ার্ড। এখানরকার বেশির ভাগ বাড়ির উঠোনো হাঁটু পরিমান পানি।

স্থানীয়রা জানায়, শুধু চৌমুহনী পৌরসভা নয় একই চিত্র জেলার সদর উপজেলার নেয়াজপুর, চরমটুয়া, কাদির হানিফ ইউনিয়ন, কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর, সুন্দলপুর ইউনিয়ন, সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া, কেশারপাড়, ডমুরুয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের। এছাড়াও বেগমগঞ্জ,সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়নে এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। দীর্ঘ এই জলবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

তারা জানায়, নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুর হয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে পড়ে। তাই নোয়াখালীর পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে লক্ষ্মীপুরের খালের ওপর সকল বাঁধ, অবৈধ স্থাপনা, ভেসাল জালসহ পানি নামার জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো সরাতে হবে। এক্ষেত্রে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করা দরকার।

অনেক বাড়ির লোকজন চলাচল উপযোগী বিশেষ ব্যবস্থা নিজ উদ্যোগে করে নিয়েছে। ছবি: খবর সংযোগ

চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী সোহান জানান, বাজারের প্রধান সড়ক ছাড়া বাকি সবকয়টি এলাকা অনেক নিচু। বন্যার পর কয়েকবার পানি নেমেছিল, আবার বৃষ্টিতে পানি জমে। একদিন বৃষ্টি হলে চার দিন পানি জমে থাকে। বড় খালগুলোতে ময়লা ফেলে ভরাট করা। আশপাশের সবগুলো ছোট খাল দখল করে বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ও এ সকলের ব্যবহারের জন্য সড়ক তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে প্রতিটি জায়গায় পানি আটকে আছে।

জেলা শহর মাইজদীতে বসবাসকারী মিলন বলেন, শহরে জলাবদ্ধতার কারণ অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা।

তার মতে, যেভাবে ড্রেনের ব্যবস্থা কথা থাকলে সেজায়গায় নালা করা হয়েছে। ফলে এ টুকু জায়গা দিয়ে পানি নামছে না। এছাড়া ময়লা ফেলে পানির গতিপথ বন্ধ করা হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই শহরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। আজ প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে শহরে জলাবদ্ধতা লেগেই আছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের রাজস্ব বিভাগের কাগজে-কলমে অনেক খালের হিসাব থাকলেও বাস্তবে তা নেই। কয়েক বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাবশালীরা খালগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দিয়েছে, নিজেরাও দখলে নিয়েছেন অনেকাংশ।

গত ১৬ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের সবশেষ তথ্য মতে, জেলায় বন্যা এখনও পানি বন্দি ১১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ। খোলা রয়েছে ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্র, যেখানে এখনও রয়েছে প্রায় ৭শতাধিক মানুষ।

জেলা প্রশাসক খন্দতার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, বন্যা পরবর্তী সময় বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক স্থান থেকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় খালের ওপর থাকা কিছু স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পানি প্রবাহ সচল করতে খাল পরিষ্কারের কাজও করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে খাল দখল করে যেসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো ভেঙে দেওয়াসহ খাল পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা পরিকল্পনায় রয়েছে।

RA/FI
আরও পড়ুন