ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

অযত্নে-অবহেলায় মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র

আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১০ পিএম

অযত্ন আর অবহেলায় বেহাল দশা বাংলা সাহিত্যের অমর দিকপাল, ঔপন্যাসিক, উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি মুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ, নাট্যকার ও গদ্যশিল্পী ‘বিষাদ-সিন্ধু’র’ রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রেটির। দেশের সম্ভাবনাময় সাহিত্যের তীর্থস্থান এটি হলেও অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে স্মৃতিকেন্দ্রটি।

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে স্মৃতিকেন্দ্রটি অবস্থিত। 

জানা গেছে, কালজয়ী কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর মীর মশাররফ হোসেন কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ মীর মুয়াজ্জম হোসেন ও মায়ের নাম দৌলতন নেছা। তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী নবাব স্টেটে বসবাস করতেন। এখানেই তিনি ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাকে পদমদীতে বিবি কুলসুমের পাশে সমাহিত করা হয়।

এখানে তার স্মৃতি রক্ষার্থে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে ৮৪ শতাংশ জমির ওপর ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় স্মৃতিকেন্দ্রটি। এরপর থেকেই মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কমপ্লেক্সটির যাত্রা শুরু।

তবে বর্তমানে কমপ্লেক্সটির দেওয়ালে ধরেছে ফাঙ্গাস। চারপাশে জমেছে ময়লা। অযত্ন আর অবহেলায় দিন দিন সৌন্দর্য হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। লোকবলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্মৃতিকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা। সাহিত্য প্রেমিকেরা হচ্ছেন বিমুখ। শুধুমাত্র জন্মদিন এলেই পরিষ্কারের তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায়।

সরেজমিনে বালিয়াকান্দির পদমদি গ্রামের মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতিকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতি কেন্দ্র কোন দর্শনার্থী নেই। দুইজন কর্মচারী বারান্দায় বসে সময় পার করছেন। স্মৃতিকেন্দ্রের ভবনের দেয়ালে বেশ কয়েকটি স্থানে ফাঁটল ধরেছে। পলেস্তারা খসে পড়ছে।স্মৃতিকেন্দ্রের ভেতরের প্রবেশপথের দুই পাশ দিয়ে থাকা লাইটগুলো খোয়া গেছে। মীরের লেখা বইগুলো পাঠকের অপেক্ষায় বুক সেলফে সাজানো রয়েছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ভালো নয়। পাঠক ও দর্শনার্থী সেখানে আসলে তাদের বসার স্থান নেই, বেঞ্চগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন বন্ধ থাকে এই স্মৃতিকেন্দ্রটি। মানুষ সাধারণত ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়। অথচ সেই সময় স্মৃতিকেন্দ্রটি বন্ধ থাকে।

মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি কবি সালম তাসির বলেন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠানটি বাংলা একাডেমি পরিচালনা করেন। জেলা প্রশাসন স্মৃতিকেন্দ্রে কাজ করতে ইচ্ছুক। তবে বাংলা একাডেমি স্মৃতিকেন্দ্রের উন্নয়নে সেভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। স্মৃতিকেন্দ্র থেকে সাহিত্যের আলো ছাড়তে বাংলা একডেমির আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কবি খোকন মাহমুদ বলেন, আমি কয়েকবার মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র গিয়েছি। সেখানে গিয়ে আমার কাছে সাহিত্যিকরা লেখালেখি করবেন অথবা সময় কাটাবেন তেমন পরিবেশ পাইনি। স্মৃতিকেন্দ্রটি অযত্ন আর অবহেলায় রয়েছে। লোকবল সংকট রয়েছে।বেশিরভাগ সময় স্মৃতিকেন্দ্রটি বন্ধ থাকে।সংগ্রহশালায় তেমন কিছু নাই, ইন্টারনেট সংযোগ নাই, বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে।

তানজিদ মাহমুদ শুভ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কেন্দ্রটিতে জনবলের অভাব রয়েছে। সংগ্রহশালায় মীর মশাররফ হোসেরন বিভিন্ন সাহিত্যকর্মের নিদর্শন থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মীরের স্মৃতিকেন্দ্র ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র ও একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা শোনা যায়। তবে কোন সরকারই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আর নজর দেয়নি। নামমাত্র মীরের জন্মদিন পালন করা হয়। এককথায় বলা যায় ধ্বসের দ্বারপ্রান্তে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রটি।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, সম্প্রতি মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রটি আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। সেখেন বেশ কিছু কাজ করা দরকার। মীরের স্মৃতিকেন্দ্রটি বাংলা একাডেমির অধীনে। সেখানের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিচালনা বাংলা একাডেমি করে থাকেন। আমাদের নজরে আসা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বাংলা একাডেমির সাথে কথা বলেছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্মৃতিকেন্দ্রে আসা দর্শনার্থী ও পাঠকদের জন্য বসার বেঞ্চ মেরামত, দেয়ালে রং করা, ইন্টারনেট সংযোগসহ বেশ কিছু কাজ করা হবে।

NJ
আরও পড়ুন