চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের ২০ চাষী তাদের পেঁয়াজ ক্ষেতে মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ উৎপাদিত য়োকরাল ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছিলেন। এরপর তাদের প্রায় ৩০ বিঘা জমির পেঁয়াজ পচে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। আর এই ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার মতো বলে জানিয়েছেন চাষীরা।
পেঁয়াজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষেতের প্রতিটি গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে।

চাষীরা জানায়, পেঁয়াজ চাষে তাদের বিঘা প্রতি ব্যয় হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। ফলন হওয়ার কথা প্রতি কাঠায় ৮ মণ হিসাবে বিঘায় ১৬০ মণ। প্রতি বিঘায় তাদের দুই লাখ টাকা পোঁয়াজ উৎপাদন হতো বলে চাষীরা জানিয়েছেন।
ওই ইউনিয়নের জাহাজপোতা গ্রামের পেঁয়াজ চাষী সেলিম জানান, তিনি আড়াই লাখ টাকার গরু বিক্রি করে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। পেঁয়াজ ও তার সঙ্গে সাথী ফসল মুখী কঁচু পুড়ে যাওয়ায় তার আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী হরিরামপুর গ্রামের আরিফুলের দোকান থেকে মার্শাল কোম্পানির য়োকরাল কীটনাশক কিনে সাড়ে তিন বিঘা পেঁয়াজের জমিতে ব্যবহার করে ছিলেন। এখন মহাজন ও এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝে দিন কাটচ্ছে তার।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, হুদাপাড়া গ্রামের লিটনের ১৬ কাঠা, একই গ্রামের কালু কয়ালের ১০ কাঠা, খোকনের ১ বিঘা, সাগরের ১২ কাঠা ও খোকনের ১০ কাঠা, জাহাজপোতা গ্রামের ফয়সালের ২৫ কাঠা, একই গ্রামের মহত আলী,আব্দুর রাজ্জাকের দেড় বিঘা, শরিফ উদ্দিনের ২ বিঘা, হরিরামপুর গ্রামের সরদারের ২ বিঘা ও জমিরুলের ১০ কাঠা, মুন্সীপুর গ্রামের নাজমুলের ২৫ কাঠা, সিরাজের ২৫, দুখো, শাকিল, শাহাবুদ্দিন, মনিরুল ও হাবিবুরের ১ বিঘা করে ও কার্পাসডাঙ্গার সাঈদের ১৬ কাঠা ক্ষেতের পেঁয়াজ পুড়ে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
হুদাপাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষী মহত আলী জানান, ভারতীয় সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের বীজ এনে প্রতি বছর সীমান্তবর্তী এ গ্রামগুলোতে শত শত বিঘা জমিতে চাষীরা পেঁয়াজ চাষ করে থাকেন। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বয়রা, হুদাপাড়া, জাহাজপোতা, হরিরামপুর, কুতুবপুর, চন্দ্রবাস, শিবনগর, মুন্সীপুর, আটকবর, কানাইডাঙ্গা গ্রামের পেঁয়াজ চাষীরা এ বার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

এ ব্যাপারে কোম্পানির ডিলার হাসিবুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। কোম্পানির লোক সব বলতে পারবে। বড় বড় অফিসার এটা দেখছে। আপনি কোম্পানির কর্মরত আরিফের সাথে কথা বলেন।
কোম্পানির ফিল্ড অফিসার আরিফুল বলেন, আমরা মাঠে তদন্ত করে একটা তালিকা করেছি। ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, আমরা শুনেছি এবং সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্থ মাঠ পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সাথে জড়িতদের ডেকে কথা বলেছি, তারা আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
