ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ভালুকায় সৌদির খেজুর চাষে সাফল্য, বছরে আয় ৫০ লাখ টাকা

আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৫:১৯ পিএম

সৌদি আরবে খেজুরবাগানে কাজ করতে গিয়ে কিছু বীজ দেশে এনে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছিলেন ময়মনসিংহের ভালুকার আবদুল মোতালেব। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা। বর্তমানে তার খেজুর বাগান থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকারও বেশি আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মোতালেবের এই সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় অনেকেই খেজুর চাষ শুরু করেছেন।

আবদুল মোতালেব উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে ৩ বছর খেজুরবাগানে কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০০১ সালে দেশে ফেরেন। ফেরার সময় প্রায় ৩৫ কেজি উন্নত জাতের খেজুরের বীজ নিয়ে আসেন। প্রথমে বাড়ির আঙিনায় ৭০ শতাংশ জমিতে ২৭৫টি চারা রোপণ করেন।

বর্তমানে তার ৭ বিঘা জমির বাগানে ৩ হাজারেরও বেশি খেজুরগাছ রয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের আজওয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের খেজুর রয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে ঝুলছে সৌদি খেজুর। মোতালেব জানান, বাজারে আজওয়া খেজুর ৩ হাজার টাকা, শুক্কারি এক হাজার, আম্বার আড়াই হাজার, লিপজেল সাড়ে চার হাজার এবং মরিয়ম ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু খেজুর নয়, চারারও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাটিং করা একটি চারা ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর বীজ থেকে তৈরি চারা বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়।

আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমি পড়ালেখা করিনি, কিন্তু কৃষিকাজ জানি। সৌদি আরবে খেজুরবাগানে কাজ করে ভাবলাম, দেশে যদি খেজুর চাষ করতে পারি, তাহলে বিদেশ যেতে হবে না। সেই চিন্তা থেকেই দেশে বীজ নিয়ে আসি। দীর্ঘ ১৮ বছরের গবেষণায় মাত্র ৭টি মাতৃগাছ পেয়েছি। সেখান থেকে কাটিং করে চারা উৎপাদন শুরু করি। এখন বাগান থেকে যে আয় হচ্ছে তাতে আমার পরবর্তী প্রজন্মও স্বচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবে।’

বাবার পাশাপাশি খেজুরবাগান গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছেন মোতালেবের ছেলে মিজানুর রহমানও।

তিনি বলেন, ‘২০২৩ সাল থেকে বাবার সঙ্গে কাজ শুরু করি। খেজুরগাছে কাটিং করে নতুন চারা উৎপাদন শিখেছি। পাশাপাশি দেশি ও সৌদি খেজুরগাছ ক্রস করে এমন একটি জাত উদ্ভাবন করেছি, যেটি থেকে প্রচুর রস উৎপাদন সম্ভব।’ বর্তমানে বাবা-ছেলে মিলে ৮ বিঘা জমিতে প্রায় ৮ হাজার খেজুরগাছ নিয়ে নতুন একটি বাগান করেছেন, যার মাধ্যমে গুড় উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

মোতালেবের বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আশপাশের অনেকে খেজুরচাষে আগ্রহী হয়েছেন। আফাজ পাঠান নামের এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে মোতালেবের কাছ থেকে শিখে খেজুরবাগান শুরু করি। বর্তমানে চারটি স্থানে ১০ একর জমিতে বাগান রয়েছে। বছরে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।’

বাগান পরিদর্শনে আসা কবি ও সাংবাদিক সফিউল্লাহ আনসারী বলেন, ‘এখানকার খেজুর সৌদি খেজুরের মতোই সুস্বাদু। দেশে উৎপাদন বাড়লে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন।’

ভালুকা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘খেজুরে রোগবালাই তুলনামূলকভাবে কম হয়। আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে সরাসরি কোনো প্রকল্প নেই। সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া গেলে আরও বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হবে।’

NJ
আরও পড়ুন