ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

শেরপুর-২ আসনে প্রার্থীর ছড়াছড়ি, সরগরম ভোটের মাঠ

আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোলঘেঁষা সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে রয়েছে ৩টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে শেরপুর-২ আসনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নকলা ও নালিতাবাড়ী- দুই উপজেলার ভোটার নিয়ে গঠিত এই আসন থেকে যারা অতীতে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ ছিলেন হুইপ, কেউ মন্ত্রী, আবার কেউ সংসদ উপনেতা।

পাহাড়, নদী ও পর্যটন সমৃদ্ধ এই আসনটি সব দলের কাছেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই মনোনয়ন বাছাইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে হিসেব-নিকেশ করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো শেরপুর-২ আসনেও শুরু হয়েছে সরব রাজনৈতিক তৎপরতা। আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় বিরোধী ও ছোট দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রার্থীদের মধ্যে চলছে কৌশল যুদ্ধ ও অবস্থান রক্ষার প্রতিযোগিতা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ৮ জন। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই একজনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এনসিপি থেকে দুইজন, ইসলামী আন্দোলন থেকে একজন, এবি পার্টি থেকে একজন, গণঅধিকার পরিষদ থেকে একজন এবং খেলাফত মজলিস থেকেও একজন প্রার্থী নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

ভোটারদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। তবে তিন থেকে চারজন প্রার্থী মাঠে থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। যদিও বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন, তবুও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে কেউ বিদ্রোহী হবেন না বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছে। অন্যান্য দলগুলোর প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এই আসনটি এককভাবে আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তবে এবার দলটি মাঠে না থাকায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে অন্যান্য দলের জন্য।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন শেরপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী। তিনি সাবেক হুইপ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মরহুম জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন তিনি।

পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুর রহমান তারা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা দুলাল চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ইলিয়াস খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মোখলেছুর রহমান রিপন, এডভোকেট মাজহারুল ইসলাম বাবু এবং ছাত্রনেতা সিরাজুল ইসলাম মানিক।

প্রত্যেক প্রার্থীই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তারেক রহমানের ৩১ দফা লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।

অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলীয়ভাবে শেরপুর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়াকে (ভিপি) চূড়ান্ত প্রার্থী করেছে। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক বিতর্ক সম্পাদক এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। তরুণ প্রার্থী হিসেবে তিনি ইতিমধ্যে ভোটারদের মন জয় করেছেন। দীর্ঘ বিরতির পর এবার দাড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী থাকায় উৎসাহ ফিরে এসেছে জামায়াতের কর্মীদের মাঝেও।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতার দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন দুজন—জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর কবির মিথুন ও শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়কারী তৌহিদুল ইসলাম। সামাজিক কর্মকাণ্ড ও শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে তারা মাঠে সক্রিয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে প্রার্থী হয়েছেন দলটির নালিতাবাড়ী উপজেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুল্লাহ আল কায়েস। তিনি নিয়মিত গণসংযোগের মাধ্যমে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন।

এছাড়া আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা আবদুল্লাহ বাদশা, যিনি জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। তিনিও প্রতিনিয়ত তৃণমূল পর্যায়ে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

গণঅধিকার পরিষদ থেকে কাজী হায়াত এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা মোখলেছুর রহমানও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন।

NJ
আরও পড়ুন