ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

নওগাঁয় প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৫০ লাখ টাকার আম

আপডেট : ১২ জুন ২০২৪, ১০:৫২ এএম

নওগাঁর বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে আম। বাজারে গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, নাক ফজলি ও ল্যাংড়া আম পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ দামে আম বিক্রি হচ্ছে। আম চাষীরা ভাল দাম পেয়ে খুশি হলেও ভোক্তাদের মাঝে বিরাজ করছে অস্বস্তি। প্রতিদিন জেলার সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলা থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। ঈদ পর বেচাকেনার পরিমাণ আরও বাড়বে।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম। দেরিতে আম পাড়া শুরু হলেও ভাল দাম পেয়ে খুশি চাষীরা। এ বছর আবহাওয়া জনিত কারণে গাছে মুকুল আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তেমনি আম পরিপক্ক হতেও বিলম্ব হয়েছে। এতে করে আম বাজারে আসতে অন্তত ১৫-২০ দিন সময় বেশি লেগেছে। গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২৪শ টাকা, ক্ষিরসাপাত/হিমসাগর ২৫শ থেকে ২৮শ টাকা, নাক ফজলি ২২শ থেকে ২৪শ টাকা এবং ল্যাংড়া/হাড়িভাঙ্গা ২৪শ থেকে ২৬শ টাকা মণ। চলতি মৌসুমে দাম বেশ চড়া। তবে চাষীরা আমের ভাল দাম পেয়েও ভোক্তাদের মাঝে বিরাজ করছে অস্বস্থি। আম কিনতে গিয়ে দাম শুনার পর অনেকে হতভম্ব হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১১ জুন) সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া মহল্লার বাবু চৌধুরীর বাগান থেকে ঝোপায় ঝোপায় নামানো হচ্ছে ল্যাংড়া আম। এরপর আঠা শুকানোর জন্য রাখা হচ্ছে ঘাসের ওপর। তারপর ক্যারেটে ভরে বিভিন্ন যানবাহনে করে সাপাহার জিরো পয়েন্টে গড়ে উঠা বৃহৎ আমের আড়তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ জেলার আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ব্যবসায়ীদের হাত ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। ঢাকা সহ অন্যান্য জেলার ব্যবসায়ীরা এসে কিনছেন আম।

সাপাহার উপজেলার বাকরইল গ্রামের আম চাষী নবদ্বীপ বলেন, এ মৌসুমের শুরু থেকে অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড খরা বিরাজ করছিল। এতে পরিশ্রম করতে হয়েছে। গাছে মুকুল কম আসায় আমও কম এসেছে। তবে আমের পরিমাণ কম হলেও আকারে বড় হয়েছে। গত বছরের তুলনায় দাম প্রায় দ্বিগুণ। ক্ষিরসাপাত আম ২৬শ টাকা মন বিক্রি করেছি। যা গত বছর ছিল ১২শ-১৪শ টাকা মন। ভাল দাম পেয়ে খুশি।

ভাতকাড়া গ্রামের আম চাষী মোবারক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আম ক্যারেটসহ ৪৮ কেজিতে মন বিক্রি হওয়ার কথা। সেখানে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ৫০-৫২ কেজিতে মন কিনে। আড়তে নিয়ে যাওয়ার পর বলে আম ছোট-বড় মিশিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আবারও দাম কম দেয়। আমাদের বাধ্য হয়ে ওজনে বেশি দিতে হয় আবার দামও কম পাওয়া যায়।

সাপাহার আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, প্রায় ৩০০ জন সমিতির সদস্য। তবে অল্প সংখ্যক আড়ত চালু হয়েছে। বাজারে ৩-৪ জাতের আম আসছে। গত বছরের তুলনায় দামও দ্বিগুণ। প্রতিদিন এ বাজার থেকে ৩০-৪০ লাখ টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। তবে ঈদের পর আম্রপালি সহ অন্যান্য জাতের আম বাজারে আসবে। এতে বাড়বে বেচাকেনা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর জেলায়  ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। যা থেকে প্রায় ৪ লাখ ৩১ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজারমুল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। রপ্তানি পরিসর বাড়াতে উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, আম ব্যবসায়ীদের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন ভাবে আম চাষী বা কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না বা ওজনে বেশি নেয়া যাবে না। যেহেতু আম পচনশীল পন্য সেহেতু গত মৌসুমে কৃষকদের সিদ্ধান্ত ছিল ৪৫ কেজিতে মন তবে ক্যারেটসহ ৪৮ কেজি। কিন্তু কখনও কখনও ব্যবসায়ীরা এটাকে ৫০-৫২ কেজিতে নিয়ে যায়। এ মৌসুমে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কৃষকরা যা মেনে নিয়েছেন ৪৫ কেজিতে মণ অথবা কেজি দরে কিনতে হবে। যেখানে ক্যারেটের কোন ওজন থাকবে না। কেজি হিসেবে দাম হবে এবং কেজিতে মুল্য পরিশোধ। ওজনে কোনো বেশি নেয়া যাবে না।

AHA/WA
আরও পড়ুন