ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক

রাকাব কর্মকর্তার লাঞ্চ বিল সোয়া ৪ কোটি!

আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৪ পিএম

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন করে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা তছরুপ করার অভিযোগ উঠেছে। চাকরিতে বেতন-ভাতার বিধান ভঙ্গ করে ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরে লাঞ্চ ভাতার নামে এসব অর্থ ব্যয় দেখানো হয়। 

বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেলের এক প্রতিবেদনে এসব আর্থিক অনিয়ম বেরিয়ে আসে। এমনকি অডিট আপত্তির জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় অপচয় হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার সুপারিশও করা হয়। কিন্তু সেই আপত্তি আমলেই নেয়নি কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। অব্যাহত আছে সেই ভাতা গ্রহণ। ফলে রাষ্ট্রায়াত্ত এই ব্যাংকটি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।

অডিট প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২য় থেকে ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তারা দৈনিক উপস্থিতির জন্য ২০০ টাকা হারে লাঞ্চ ভাতা গ্রহণ করে। কিন্তু ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা আদেশ অনুযায়ী শুধুমাত্র ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা মাসিক ২০০ টাকা হারে টিফিন ভাতা পাবেন। তবে যে সকল কর্মচারী লাঞ্চ ভাতা অথবা বিনামূল্যে দুপুরের খাবার পান তারা টিফিন ভাতা পাবেন না।

তবে রাকাবের প্রধান কার্যালয়, স্থানীয় মুখ্য কার্যালয় রাজশাহীসহ এর আওতাধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নীলফামারী, সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, বীরগঞ্জ, রংপুর, মিঠাপুকুর, গাইবান্ধা এবং গোবিন্দগঞ্জ শাখা ২০১৯-২০ ও ২০২০- ২১ অর্থ বছরে অনিয়মিতভাবে কর্মকর্তাদের লাঞ্চ ভাতা প্রদান করে। এতে চাকরি (ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ লঙ্ঘিত করে অনিয়মিতভাবে লাঞ্চ বাবদ ৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।

এদিকে অভিযোগের জবাবও আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানায় অডিট কমিটি। তাদের দাবি, অভিযোগের ব্যাখ্যার সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জবাবে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেতন ও ভাতার বিধানে লাঞ্চ ভাতার কথা বলা থাকলেও তা ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা পাবেন। কিন্তু নির্দেশনা অনুসরণ না করে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে লাঞ্চ ভাতা প্রদান করা হয়।

এদিকে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান বরাবর অওজ জারি করা হয় এবং রাকাবের সচিবকে জানানো হয়। পরে একই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তাগিদপত্র দেওয়া হয়। জবাব না পাওয়ায় পহেলা মার্চ রাকাবের প্রধান নির্বাহী বরাবর আধা সরকারি পত্র দেওয়া হলেও নিষ্পত্তিমূলক জবাব দেওয়া হয় নি। এমনকি অডিট আপত্তির পরও লাঞ্চ ভাতা গ্রহণ করেই যাচ্ছেন রাকাবের কর্মকর্তারা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাকাব কর্মকর্তা জানান, অডিট আপত্তির নিষ্পত্তি না হলেও তারা লাঞ্চ ভাতা পাচ্ছেন। সব গ্রেডের কর্মকর্তাই লাঞ্চ ভাতা পাচ্ছেন। আমরাও ভাতা পাচ্ছি। সব ব্যাংকেই এটি আছে। আমাদের ব্যাংকেও আছে। কমার্শিয়াল অডিট আপত্তিতে এটা উঠে এসেছিল। কিন্তু এরপরও এখন পর্যন্ত এটি চালু আছে।

এ ব্যাপারে রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমি ঢাকায় মিটিংয়ে আছি। এরকম একটা অডিট আপত্তি ছিল সেটা আমি জানি। এটার বর্তমান আপডেট অফিস গেলে জেনে জানাতে পারবো। এই লাঞ্চের নিয়ম সব ব্যাংকেই আছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকেও আছে। আমাদের এখানেও নিয়ম অনুযায়ী ভাতা গ্রহণ হয়েছিল। তবে এখন কি অবস্থা, সেটা বিস্তারিত জেনে জানাবো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, রাকাব এখন ভাতের হোটেলে পরিণত হয়েছে। যেন বাংলাদেশের সব থেকে দামি ভাতের হোটেল। নয়তো তারা সোয়া চার কোটি টাকার লাঞ্চ খেতেন না। রাকাব উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এখানে রাজনীতি করণ ও দলীয়করণ করে প্রতিষ্ঠানটিকে শেষ করা হয়েছে। হুট করে তারা প্রতিষ্ঠানটিকে লাভবান দেখিয়েছেন। এটির মাধ্যমে বোঝা যায়, তারা ইচ্ছেকৃতভাবে দুর্নীতি ও লুটপাট করে প্রতিষ্ঠানটিকে দাবিয়ে রেখেছে। অংকের হিসেবে এই সোয়া ৪ কোটি টাকা ক্ষুদ্র মনে হলেও এরকম ছোট ছোট দুর্নীতির মাধ্যমেই কোনো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। অনতিবিলম্বে এসব দুর্নীতি বন্ধ করা দরকার।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, কৃষকদের জন্য এই ব্যাংক শুরু হয়েছিল। কিন্তু ঋণের সুবিধা কৃষকদের বদলে ব্যাংক খেকো ধনী ব্যক্তিরা পাচ্ছেন। এভাবেই তারা ব্যাংকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যারা এত টাকার লাঞ্চ খেয়েছেন অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।

AHA/WA
আরও পড়ুন