ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

কুড়িগ্রামে আলুর কেজি ৮ টাকা, লোকসানের মুখে চাষিরা

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:০৮ পিএম

গতবার ভালো দাম পাওয়ায় এবার আলু চাষের দিকে ঝুঁকেছেন কুড়িগ্রামরে চাষিরা। তবে বেশি ফলন হওয়ায় উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, এবার আলু চাষের বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়ায় সিন্ডিকেটের দখলে ছিল আলু বীজ। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজিতে অতিরিক্ত ৬০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে বীজ আলু। সাথে সার, কীটনাশক ও শ্রমব্যয় তো আছেই। এতে করে উৎপাদন ব্যয় একরে বেড়েছে ৫০ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।  

কুড়িগ্রাম জেলার সদর, রাজারহাটসহ প্রায় ৯ উপজেলার ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ফুলকুমার চর এলাকায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা সাত হাজার হেক্টর হলেও উৎপাদন হয়েছে আট হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু সার, কীটনাশকের সাথে বীজ আলুর বাড়তি দামে আলু চাষিরা বিপাকে। সরকার নির্ধারিত ৬০ টাকার আলু বীজ কৃষকদের কিনতে হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত।

ছবি: খবর সংযোগ

বর্তমানে কুড়িগ্রামে কিছু কিছু আগাম আলু উত্তোলন হলেও এখনও অধিকাংশ জমিতে আলু উত্তোলন বাকি আছে। ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম ২০ টাকা হলেও পাইকারি বাজারে ১৩ থেকে ১৬ টাকা। কৃষকরা বিক্রি করছে আট টাকায় অথচ এবার উৎপাদন খরচ সবমিলিয়ে ২৫ থেকে ২৭ টাকা। মাঠ পর্যায়ে সব আলু উত্তোলন হলে দাম আরও কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আলু দাম না পেয়ে লোকসানের মুখে হাজারো কৃষক।

রাজারহাট উপজেলার তিস্তার চরে আরিফ হোসেন দুই একর জমিতে আলু চাষের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এখন আলু বিক্রি করছি আট টাকা করে। অথচ আমার আলুতে খরচ হয়েছে কেজি প্রতি ২৫ টাকার মতো। সবমিলিয়ে আমার দুই একরে লোকসান হবে দুই লাখ টাকার।

চাষি আরিফ বলেন, শুধু আমিই নই আমাদের এলাকার অনেক কৃষক এবার আলুর চাষ করে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা পথে বসে যাব এবার। বীজ কিনছি ১১০ টাকা কেজি। আমাদের বিএডিসিতে দালালে ভরা। বিএডিসিতে তিন দিন গেছি। তারা বলে, বীজ আসেই, পাওয়া যায় না। কয়েকদিন পরে বলে বীজ আর নেই, শেষ। পরবর্তীতে দালালের কাছ থেকে ৬০ টাকার বীজ ১১০ টাকায় নিলাম। দাম না হলে মাঠে মারা যাব। কয়েকবার স্টোরেজেই আলুর বস্তা ছেড়ে দিয়ে আসছি। 

বেলগাছা ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার হোসেন ১০ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। আলুর বীজের দামের কারণে এবার উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে বলে জানান তিনি।

ছবি: খবর সংযোগ

নাম না প্রকাশ অনিচ্চুক কুড়িগ্রাম (বীজ বিপণন) কার্যালয়ে কর্মরত এক শ্রমিক বলেন, এখানকার ঠিকাদার, বিপণন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কুলির সর্দার মিলে তৈরি করেছেন একটি সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে আলুর বীজের বিক্রি করতো।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো.আসাদুজ্জামান বলেন, এবার আলুতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে বীজ আলুর দাম বেশি। এছাড়া এবার কৃষকরা বেশি আলু উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছিল, শ্রমব্যয় বেশি ছিল। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচটা একটু বেশি হয়েছে। তবে আমরা যদি কৃষকদের গুদামজাতের নিশ্চয়তা দিতে পারি। কৃষকরা যদি ভালমতো গোদামজাত করতে পারে। দাম যখন বেশি হবে তখন বিক্রি করলে কৃষকরা  লাভবান হবার সম্ভাবনা আছে। 

RA
আরও পড়ুন