ঢাকা
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পারভেজ হত্যা: আলোচিত শিক্ষার্থী টিনা তিন দিনের রিমান্ডে

গ্রেপ্তার মাহাদী হাসান জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন, ফারিহা মাহবুব ওরফে টিনা সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলকর্মী ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্তদের মধ্যে আলোচিত শিক্ষার্থী ফারিহা হক ওরফে টিনাকে (২০) তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। 

শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে টিনাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে বনানী থানা পুলিশ। আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একেএম মঈন উদ্দিন (পুলিশ পরিদর্শক, অপারেশনস) ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপপরিদর্শক মোক্তার হোসেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি মাহাদী হাসান ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন যে, ফারিহা মাহবুব ওরফে টিনা সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। হত্যার নেপথ্যে থাকা মোটিভ ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে টিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ২টার দিকে রাজধানীর ভাটারা থানার জগন্নাথপুর এলাকায় র‍্যাব-১ অভিযান চালিয়ে টিনাকে গ্রেপ্তার করে। টিনার পরিচয় সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় তুমুল আলোচনা, যা মামলাটিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়।

২০ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেখানেই ছুরিকাঘাতে নিহত হন পারভেজ।

টেক্সটাইল বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ঘটনার শুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি দোকান থেকে, যেখানে পারভেজ বন্ধুদের সঙ্গে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। পাশে থাকা সদ্য ভর্তি হওয়া ইংরেজি বিভাগের ও ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী অভিযোগ করেন, পারভেজ তাদের উত্ত্যক্ত করেছেন। বিষয়টি প্রক্টরের কাছে গেলে পারভেজকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পারভেজ দাবি করেন, তিনি কাউকে উত্ত্যক্ত করেননি এবং একপর্যায়ে ক্ষমা চান।

তবে প্রক্টর অফিস থেকে বের হওয়ার পর ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতরা মিলে পারভেজের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে আঘাত করে তারা পালিয়ে যায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় পারভেজকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহতের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বনানী থানায় আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০–৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইতোমধ্যে একাধিক আসামি গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে রয়েছে। পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও সম্পৃক্তদের বের করতে তদন্ত জোরদার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া এবং বহিরাগতদের সহজে প্রবেশের সুযোগ থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দ্রুত বিচার ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা কারা মদদদাতা হিসেবে কাজ করেছে, সেটি বের করতে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মামলাটি শুধু ব্যক্তি হত্যা নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহিংস রাজনীতিরও একটি প্রতিফলন।

 

 

Raj/FJ
আরও পড়ুন