জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর আন্দোলনে আহতদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোস্তাক আহমেদ। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল উঁচু জায়গা বা হেলিকপ্টার থেকে, আর সেই গুলি কারও মাথায় লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, আহতদের চিকিৎসায় বাধা দিয়েছিলেন তৎকালীন সরকার-সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন স্বাচিপের কিছু সদস্য। আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে চিকিৎসা না দিতে নিষেধ করেছিলেন তারা।
ডা. মোস্তাক বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় আহতদের গুলির ডিরেকশন ছিল ওপর থেকে নিচের দিকে। সাধারণত আমরা দেখি নিচ থেকে ওপরে বা সমান্তরাল গুলি। এমন গুলির ক্ষতভিন্ন। আমি নিজে দেখেছি, কারও মাথায় গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
তিনি জানান, ১৯, ২০, ২১ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্ট এই পাঁচ দিনে সবচেয়ে বেশি গুলিবিদ্ধ রোগীর সেবা দিয়েছেন তিনি।
সাক্ষ্যে উঠে আসে ঢামেক হাসপাতালের শহীদুল্লাহ হল সংলগ্ন গেটে ছাত্রলীগের কর্মীরা অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে রোগীদের পরিচয় যাচাই করতেন। যারা আন্দোলনকারী, তাদের হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হতো না। হাসপাতালে ঢুকে আহতদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করত সশস্ত্র ছাত্রলীগকর্মীরা। আতঙ্কে অনেক আহত ছাত্র চিকিৎসকদের অনুরোধ করতেন তাদের পরিচয় যেন গোপন রাখা হয়।
ডা. মোস্তাক বলেন, স্বাচিপের কয়েকজন চিকিৎসক আমাদের অতিউৎসাহী হতে নিষেধ করেন। বলেন, ‘এরা সন্ত্রাসী, চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।’ এমনকি আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার দায়ে গত বছরের ২৫ জুলাই আমাদের পাঁচজন চিকিৎসককে বদলি করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ডা. মোস্তাক সরাসরি অভিযোগ করেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে। তিনি তাদের বিচার দাবি করেন।
এই মামলায় মঙ্গলবারই ২৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন ডা. মোস্তাক। এদিন আরও দুজন চিকিৎসক ডা. মফিজুর রহমান (মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক), ডা. মনিরুল ইসলাম (ঢামেকের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার) সাক্ষ্য দেন। সব মিলিয়ে নবম দিনে মোট ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সারা দেশে সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের সময় ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দমন করতে ব্যাপক গুলিবর্ষণ, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। সেই সময়কার ঘটনার বিচার ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে শনাক্ত করতে চলমান রয়েছে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ।
