ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের পলাতক আসামি সিয়াম নেপালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে নোটিশ জারি করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেপালের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে আসামি সিয়াম।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নেপালে তাকে যে কোনো সময় গ্রেপ্তাতার করা হতে পারে। এমনটাই আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সিয়ামকে ধরতে এনসিবিতে (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) আবেদন করা হয়েছে। এনসিবি তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে জোরালো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করছি, খুব দ্রুত একটি ভালো খবর পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, বিষয়টির সঙ্গে ভারতও জড়িত। তাই শত ভাগ নিশ্চিত না হয়েছে এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, এমপিকে হত্যার জন্য ঘাতকরা দুটি পরিকল্পনা করেছিল। একটি ‘এ’ এবং অন্যটি ‘বি’। এ ক্ষেত্রে বি’ প্ল্যান কার্যকর করা হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহের দায়িত্ব ছিল গ্রেপ্তারকৃত তানভীর ভূঁইয়া এবং নেপালে পলাতক আসামি সিয়ামের। এজন্য দুজনকে দুই ধরনের কাজ দেয় খুনের মূল সমন্বয়ক শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ। গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি সেলিস্তি রহমানের ভূমিকা এখনো রহস্যজনক। কারণ সেলিস্তি হলো হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী। ৩০ এপ্রিল সে শাহীন এবং আমানুল্লাহর সঙ্গে কলকাতায় যায়। কিলিং মিশনের সব ব্যবস্থা করার পর ১০ মে শাহীন ঢাকায় চলে আসেন। কিন্তু আমানুল্লাহর সঙ্গে সঞ্জীবা ভবনে থেকে যায় সেলিস্তি। শাহীনের সঙ্গে ঢাকা না ফিরে সে কেন কলকাতায় থেকে গেল সে বিষয়ে সেলিস্তি ডিবিকে যে বক্তব্য দিচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না ডিবির কাছে।
সূত্র জানায়, ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের ক্ষেত্রে সিয়ামের ওপর দায়িত্ব ছিল- হত্যাকাণ্ডের পর এমপির মোবাইল ফোনগুলো ঘটনাস্থল কলকাতা থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া। সে অনুযায়ী ১৩ মে সিয়াম ঘটনার পর এমপির মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে কখনো বিহার, কখনো দিল্লি, কখনো বেনাপোলসহ বিভিন স্থানে যান। ওই সব স্থান থেকে এমপির ঘনিষ্ঠ লোকদের এসএমএস করেন। এমপির মোবাইল থেকে করা এসএমএসে বোঝানো হয় যে, তিনি (এমপি) ভিআইপিদের সঙ্গে ভারতে মুভমেন্টে আছেন। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যাতে তদন্তের জন্য ওইসব স্থানকে গুরুত্ব দেয়। এটা ছিল মূলত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিভ্রান্ত করার কৌশল।
সূত্র আরও জানায়, সিয়ামের মূল দায়িত্বই ছিল বাইরে। তাকে ঘটনাস্থল সঞ্জীবা গার্ডেনসেও নেওয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পর এমপির খণ্ডিত হাড়গুলো খালে ফেলার ক্ষেত্রে জাহিদ ওরফে জিহাদের সহযোগী ছিল সিয়াম। পরে ধরা পড়ার ভয়ে সে নেপাল চলে যায়।
গত ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। কলকাতার ব্যারাকপুরসংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। ১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন আনার। পরে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে মর্মান্তিকভাবে খুন হন এমপি আনার।
