ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

জানা গেলো আশরাফুল হত্যার নেপথ্যের কাহিনী

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৯ এএম

পরকীয়ার জের ধরে ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে হত্যার পর মরদেহ কেটে ২৬ খণ্ড করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা তারই বন্ধু জরেজ ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।  

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে দুটি নীল রঙের ড্রামে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এমন নৃশংস হত্যার ঘটনায় আসামি করা হয় তার বন্ধু জরেজুল ইসলামকে।

জানা গেছে, শামীমা আক্তার নামে বিবাহিত এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন আশরাফুল ও জরেজ। এ নারীর সঙ্গে দুজনের ছিল ত্রিভুজ প্রেম। কিন্তু এই প্রেম তাদের বন্ধুত্বে ফাটল তৈরি করেছিল। যার জেরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় আশরাফুলকে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) স্বল্প সময়ের মধ্যে ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, আশরাফুলকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। ‌মৃত্যুর দুই দিন পর তার মরদেহ কেটে ২৬ টুকরো করা হয়। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন জরেজ ও পরকীয়া প্রেমিকা শামীমা আক্তার।

এ ঘটনায় আশরাফুলের বন্ধু এবং হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি জরেজুলকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গতকাল শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ‌অন্যদিকে র‍্যাব-৩ এর  একটি দল লাকসাম থেকে হত্যাকাণ্ডের আরেক আসামি পরকীয়া প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, শামীমা আক্তার কুমিল্লার বাসিন্দা। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। শামীমার স্বামী সৌদি আরবে থাকেন। তিন বছর আগে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে তার সম্পর্ক হয় মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজুল ইসলামের সঙ্গে। ছুটিতে দেশে ফেরার সময় শামীমার সঙ্গে জরেজুলের শারীরিক সম্পর্ক হয়।

যেভাবে হত্যা করা হয় করা আশরাফুলকে

রংপুরে একই এলাকায় থাকা জরেজুল ও আশরাফুলের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। জরেজুলের মাধ্যমে আশরাফুলের সঙ্গে শামীমার পরিচয় হয়। এর পর আশরাফুল ও শামীমার মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জরেজুল ঢাকায় আসার পর দক্ষিণ ধনিয়ায় একটি বাসা ভাড়া নেন। শামীমা তার ছেলে-মেয়েকে কুমিল্লায় রেখে সেখানে ওঠেন। পরে আশরাফুল ও জরেজুল বাসায় একসঙ্গে যান। ওই সময় জরেজুলের সঙ্গে শামীমার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এটি জেনে আশরাফুলও শামীমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চান এবং তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়।

এ বিষয়টি টের পেয়ে যান জরেজুল। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি। বের হওয়ার সময় ভুলে আশরাফুলের মোবাইলও সঙ্গে নিয়ে যান তিনি। পরে মোবাইল নিতে ফিরে এসে জরেজুল দেখেন শামীমা ও আশরাফুল একসঙ্গে ঘুমিয়ে আছেন। ওই সময় তিনি বাসার ভেতরে লুকিয়ে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

ডিবি সূত্রে আরও জানা গেছে, রাত হলে শামীমা ও আশরাফুল আবার শারীরিক সম্পর্ক করলে জরেজুল তা মেনে নিতে পারেননি। পরে আশরাফুলকে বালিশ চাপা দিয়ে ধরেন জরেজুল। ওই সময় শামীমাও সেখানে ছিলেন। এক পর্যায়ে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে আশরাফুল মারা যান।

হত্যার পর মরদেহ দুই দিন বাসার ভেতরে রাখা হয়। পরে দুজন মরদেহ ২৬ টুকরো করে দুটি ড্রামে ভরে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে ফেলে দেন এবং কুমিল্লায় পালিয়ে যান।

ঈদগাহর সামনে ড্রাম পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। তখন পুলিশ এসে খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে।

জানা গেছে, আশরাফুল একটি মামলার বাদী ছিলেন। সে কারণে তার ডাটাবেজ পুলিশের কাছে ছিল। পরে সিআইডি এসে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিলে তার পরিচয় শনাক্ত হয়। পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ডিবি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করে।

এ ব্যাপারে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ত্রিভুজ পরকীয়া প্রেমের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। আশরাফুল ও জরেজুল ইসলাম একে অপরের বন্ধু হলেও শামীমা নামে এক নারীর সঙ্গে তাদের দুজনেরই পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। ‌ এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আশরাফুল তার বন্ধু ও তার প্রেমিকার হাতে খুন হয়। মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে এ বিষয়ে ডিবি তদন্ত শুরু করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তি সহযোগিতায় শুক্রবার রাত ১০ টায় কুমিল্লা থেকে জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

AHA
আরও পড়ুন