বিগত কয়েক বছরে এসএসসি পরীক্ষায় ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের জিপিএ-৫ ও পাশের হার বেড়েছে। এবছরও একই চিত্র দেখা গেছে। ফলে এবছর বিষয়টিকে বিশেষভাবে দেখছে সরকার। ইতোমধ্যে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়া ঠেকাতে ছাত্রদের জন্য উপবৃত্তিকে একটি উপায় হিসাবে কাজে লাগানোর ভাবনার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
রোববার এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে এ কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ছাত্রীদের জন্য আমরা অনেক বিশেষ ব্যবস্থা, দীর্ঘদিন ধরে উপবৃত্তি, সেগুলো ছিল; সেগুলো এখন ছাত্র এবং ছাত্রী সকলের জন্য সমানভাবে দেওয়া হচ্ছে।
“তবে, সেক্ষেত্রে যদি সেটা যথাযথভাবে কাজ না করে, আমরা সেগুলো পরির্তন করে ছাত্ররাও যাতে সমানভাবে ছাত্রীদের সাথে এগিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন।”
এ বছরও পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা।
চলতি বছর ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা।
এবার পূর্ণাঙ্গ জিপিএ অর্থাৎ পাঁচ এ পাঁচ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। তাদের মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন ছাত্র; আর ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন ছাত্রী। সেই হিসেবে ১৫ হাজার ৪২৩ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
রোববার সকালে গণভবনে ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ছাত্রদের পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীর ব্যবধান নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
ছেলেদের সংখ্যা কমার কারণ জানার পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিবিএসকে বলতে পারি জরিপের সময় এটা জানার চেষ্টা করতে। কী কারণে ছেলেরা কমবে? মেয়েরা বাড়লে খুশি হই। সমান সমান হলে ভালো। কিন্তু ছেলে কেন কমল এটা জানতে হবে। ছেলেরা পিছিয়ে আছে কেন জানতেই হবে। এটা যার যার বোর্ডে খোঁজ নেবেন। কিশোর গ্যাং কালচার দেখতে পাচ্ছি। কাজেই এটা খতিয়ে দেখতে হবে।”
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক পর্যায়ে পৃথকভাবে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি সুবিধা দেওয়া হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্ধারিত শর্তাবলীর আলোকে উপবৃত্তির আবেদন বিবেচনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের হিসাব বলছে, সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় মাধ্যমিক ও সমপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৫০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬১ জনকে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ করা হয়।
এর মধ্যে ২০ লাখ ২২ হাজার ৯৫ জন ছাত্রের বিপরীতে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৬ জন। সব মিলিয়ে তাদের দেওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে ৫০৩ কোটি টাকার বেশি। ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭৫ ছাত্রীর বিপরীতে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৬১৮ জন ছাত্র এই সহায়তা পেয়েছে।
ওই অর্থবছরে স্নাতক পর্যায়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭৯ কোটি টাকা। ৮৪ হাজার ২৮ ছাত্রীর বিপরীতে সহায়তা পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৯৬১ জন।
