ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

‘চিঠি’ নিয়ে যত জনপ্রিয় গান

আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৩ পিএম

যোগাযোগের অন্যতম এক মাধ্যমের নাম চিঠি। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই চিঠির প্রচলন ছিলো। প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন শিলালিপি বা গুহার দেওয়ালে খোদাই করা চিঠি আবিষ্কার করেছেন। ফলে বলা যায় ভাষা আবিষ্কারের পর থেকেই চিঠি লেখার প্রচলন শুরু হয়। শুরুর দিকে চিঠি মূলত তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলেও ধীরে ধীরে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ এবং অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে চিঠিকে অন্যতম আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয়।

চিঠির মধ্যে মানুষের আবেগ, অনুভূতি, স্নেহ-মমতা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা কিংবা বিরহ যেমন জড়িয়ে থাকে- তেমনি জড়িয়ে থাকে সৃজনশীল সাহিত্যের ছোঁয়া। এক সময় চিঠিতে গড়ে ওঠা সম্পর্কে ‘পত্র মিতালি’ বেশ জনপ্রিয় ছিলো। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্রমাগত উন্নয়নে চিঠির প্রচলন কমলেও তা হারিয়ে যায়নি। ডিজিটাল অ্যাপে নাম পরিচয় গোপন রেখে চিঠি লিখছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে একজনের চিঠি  পড়ার ও দেখার সুযোগ পাচ্ছেন তার বন্ধু লিস্টে থাকা সবাই। যেন চিঠির উৎসব! বোঝা যাচ্ছে চিঠির আবেদন এখনও আছে।

চিঠি নিয়ে বাংলা সঙ্গীতেও রয়েছে অসংখ্য কালজয়ী গান। এসব গানের কথা ও সুরে প্রকাশ পেয়েছে চিঠি না পাওয়ার বেদনা বা পাওয়ার আনন্দ। চিঠি নিয়ে বাংলা সঙ্গীতের এমন কিছু গান খবর সংযোগের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

“চিঠি আসবে জানি আসবে”- অপেক্ষার প্রতীক

সিনেমা আরাধনা-এর এই গানটি সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে হয়ে উঠেছিল এক চিরন্তন প্রতীক্ষার প্রতিধ্বনি। মুকুল চৌধুরীর লেখা ও আলম খানের সুরে “চিঠি আসবে জানি আসবে” আজও প্রেমিকপ্রেমিকার অপেক্ষার প্রতীক হিসেবে শ্রোতাদের মনে বেঁচে আছে।

“একটা চিঠি লিখে দাও”- প্রেমের সরল আবেদন

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গীত, সুবীর নন্দী ও সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে সন্ধি ছবির এই গানটি যেন ভালোবাসার সরলতম প্রকাশ। চিঠি লেখার অনুরোধেই ফুটে উঠেছে এক মিষ্টি ভালোবাসার গল্প।

“সে আমায় চিঠি দিয়েছে”- দূরত্বের সেতুবন্ধন

শর্ত ছবির এই গানটির প্রতিটি শব্দে আছে দেখা না হওয়ার কষ্ট, আবার খবর পাওয়ার আনন্দও। সাবিনা ইয়াসমিনের আবেগময় কণ্ঠে গানটি হয়ে উঠেছিল এক অব্যক্ত সম্পর্কের সেতু।

“চিঠি কেন আসেনা”- অভিমানের সুর

রুনা লায়লার কণ্ঠে প্রিয় শত্রু ছবির এই গানটি অভিমান, ভালোবাসা ও অপেক্ষার সংমিশ্রণ। মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা আর আলম খানের সুরে গানটি আজও শ্রোতাদের বেদনা ছুঁয়ে যায়।

“যা কবুতর চিঠি নিয়ে যা না”- প্রেমের পাখা মেলে

প্রেমগীত ছবির এই গানটিতে কবুতর হয়ে ওঠে ভালোবাসার দূত। অ্যান্ড্রু কিশোর ও সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গানটি পেয়েছিল অবিস্মরণীয় জনপ্রিয়তা। গ্রামীণ প্রেমের সহজ প্রতীক হিসেবে এই চিঠি আজও জীবন্ত।

“চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙা হাতে”- প্রবাসী জীবনের মায়া

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লেখা ও সুরে বাংলার বউ ছবির এই গান প্রবাস জীবনের নিঃসঙ্গতার এক হৃদয়স্পর্শী প্রতিচ্ছবি। “ভাঙা ভাঙা হাতে” লেখা সেই চিঠিতে আছে ঘরের মায়া, ভালোবাসার গন্ধ।

“ভালো আছি ভালো থেকো / আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো”- কবিতার রূপে প্রেম

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিখ্যাত কবিতার অবলম্বনে তৈরি তোমাকে চাই ছবির এই গানটি যেন চিঠির আকারে লেখা এক দীর্ঘ ভালোবাসার চিঠি। অ্যান্ড্রু কিশোর ও কনকচাঁপার কণ্ঠে গানটি আজও তরুণ প্রজন্মের প্রিয়।

“চিঠি লিখলাম ও লিখলাম তোমাকে”- সরল ভালোবাসার সুর

খালিদ হাসান মিলুর কণ্ঠে স্নেহ ছবির এই গানটি এক চিরন্তন প্রেমের আবেদন। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথায় আছে সেই চেনা আবেগ, যা প্রতিটি প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ে ধ্বনিত হয়।

“চিঠি এলো জেলখানাতে অনেক দিনের পর”- বেদনার বার্তা

সত্যের মৃত্যু নেই ছবির এই গানটি সমাজ-রাজনীতি ও মানবিকতার এক মর্মস্পর্শী প্রকাশ। বন্দীর কাছে প্রিয়জনের চিঠি পৌঁছানোর মুহূর্তটি এখানে হয়ে উঠেছে জীবনের প্রতীক।

“আমি চিঠি লিখে ফুলের কাছে দিয়েছি খবর”- রোমান্টিক রূপক

মনির খানের কণ্ঠে তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা ছবির এই গান চিঠিকে করেছে ফুলের মতো কোমল ও কাব্যময়। কবির বকুলের লেখা ও আলী আকরাম শুভর সুরে এটি নব্বইয়ের দশকের রোমান্টিক প্রজন্মের অন্যতম প্রিয় গান।

“চিঠি দিও প্রতিদিন”- চিরচেনা আবেগের আবেদন

সত্য সাহার সুরে ও সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে অনুরোধ ছবির এই গানটি দূরত্বের ভেতরও যোগাযোগের আকুলতা প্রকাশ করে। চিঠি এখানে হয়ে ওঠে হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের সেতুবন্ধন।

চিঠি এখন আর ডাকপিয়নের ব্যাগে ভরে আসে না- এসএমএস, ইমেইল, বা ইনবক্সে এসে পড়ে। কিন্তু বাংলা সিনেমার সেই চিঠির গানগুলো আজও মনে করিয়ে দেয়, হৃদয়ের ভাষা কাগজেই সবচেয়ে সুন্দরভাবে লেখা যায়।
চিঠি তাই শুধু কাগজ নয়- এটি এক অনুভূতির নাম, সময়ের সাক্ষী, আর চিরন্তন ভালোবাসার প্রতীক।

SN
আরও পড়ুন