তবলাবাদত ওস্তাদ জাকির হোসেনকে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের একজন পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৩ বছর বয়স থেকে বাবা বিখ্যাত তবলাবাদক আল্লারাখার কাছে তবলায় তাঁর হাতেখড়ি। এরপর বাদ্যশৈলীর মধ্য দিয়েই পূর্ব ও পশ্চিমের সংগীতজগৎকে খুব কাছাকাছি এনেছেন জাকির হোসেন।
তাঁর বাবা আল্লারাখা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’–এর অন্যতম সদস্য ছিলেন। সে কারণে বাংলাদেশের সঙ্গেও রয়েছে জাকির হোসেনের পরিবারের নিবিড় সম্পর্ক। স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশেও এসেছিলেন জাকির হোসেন।

গত দুই সপ্তাহ ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওস্তাদ জাকির হোসেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। স্থানীয় সময় ১৫ ডিসেম্বর তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই ‘অপরিবর্তনীয় কিংবদন্তি’। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। স্ত্রী আন্তোনিয়া মিনেকোলা এবং দুই কন্যা আনিসা কুরেশি ও ইসাবেলা কুরেশিকে রেখে গেছেন তিনি।
একনজরে এই কিংবদন্তির জীবন:
১৯৫১ সাল
ওস্তাদ জাকির হুসেনের জন্ম ৯ মার্চ, ভারতের মুম্বাইয়ে বিখ্যাত তবলাবাদক ওস্তাদ আল্লা রাখার ঘরে। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের পরিবেশে বেড়ে ওঠেন।
১৯৫৮ সাল
মাত্র সাত বছর বয়সে তবলার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন তাঁর বাবার তত্ত্বাবধানে। তবলার জগতে নিজের প্রতিভা দেখানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ শুরু হয়।
১৯৬৩ সাল
১২ বছর বয়সে প্রথম মঞ্চ পরিবেশনায় অংশ নেন। তরুণ প্রতিভা হিসেবে দ্রুত সবার নজরে আসেন।
১৯৬৯ সাল
বাবা আল্লা রাখার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারফর্ম করেন। এটি তাঁর আন্তর্জাতিক সংগীত জগতে প্রবেশের পথ খুলে দেয়।
১৯৭০ সাল
যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং আলী আকবর খানের সংগীত কলেজে তবলা শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। একই সঙ্গে পশ্চিমা সংগীতের বিভিন্ন ধারার সঙ্গে কাজ শুরু করেন।
১৯৭১ সাল
বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। এই সময়ে শাস্ত্রীয় সংগীত এবং ফিউশন সংগীতের সংমিশ্রণ শুরু করেন।
১৯৭৩ সাল
‘শক্তি’ নামক ফিউশন ব্যান্ড গঠন করেন, যেখানে জ্যাজ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের মেলবন্ধন ঘটে। এটি জ্যাক জন ম্যাকলাফলিনের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘমেয়াদি সংগীত সম্পর্কের সূচনা করে।
১৯৮০ সাল
‘মেকিং মিউজিক’ অ্যালবাম প্রকাশ করেন, যা ভারতীয় সংগীত এবং পাশ্চাত্য সংগীতের মেলবন্ধনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত।
১৯৮৮ সাল
ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মশ্রী সম্মাননা পান, যা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার।
২০০২ সাল
পদ্মভূষণ সম্মাননা অর্জন করেন। এটি তাঁর সংগীত জগতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করা হয়।
২০১২ সাল
গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জয় করেন ‘বেস্ট ওয়ার্ল্ড মিউজিক অ্যালবাম’ বিভাগে। এটি বিশ্বজুড়ে তাঁর জনপ্রিয়তা ও প্রতিভার প্রমাণ।
২০২৪ সাল, ১৫ ডিসেম্বর
ওস্তাদ জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। পরিবারের বিবৃতি অনুসারে, আইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস থেকে উদ্ভূত জটিলতার কার মারা যান তিনি।
