সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলাটি ক্রমাগত আমাদের ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থাকে উপহাস করে চলেছে বলে একটি রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না বলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণ আদালত এ অভিমত দেন।
রায় পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার (দুই খ্যাতিমান তরুণ সাংবাদিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড) ঘটনার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত এখনো শেষ হয়নি এবং এটি এখনো বিচারের আলো দেখতে পারেনি। দুর্ভাগ্যবশত, এই মামলাটি ক্রমাগত আমাদের ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থাকে উপহাস করে চলেছে এবং অপূরণীয় পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ১০৯ বারের মতো পেছানো হয়েছে। গত ৩০ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৪ আগস্ট পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
ওইদিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে এদিন মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব প্রতিবেদন দাখিল করেনি। তাই আগামী ৪ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করা হয়।
বহুল আলোচিত এ মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অপর আসামিরা হলেন— বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে আছেন। বাকিরা এখনো কারাগারে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে না বলে গত ১৩ মে রায় দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তবে পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়টি রাষ্ট্র পক্ষের আবেদনে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত।
