ঢাকা
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

আরও অনুসন্ধান করছে দুদক

তিন দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর ৫৮০ অ্যাপার্টমেন্ট!

দুদকের অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টিসহ এ পর্যন্ত তাদের ৫৮০টি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। 

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১১ পিএম

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ভূমিমন্ত্রী থাকার সময় মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার করে বিদেশে বিত্ত-বৈভব অর্জন ও অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাবেদ) ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামান।

দুদকের অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টিসহ এ পর্যন্ত তাদের ৫৮০টি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া তাদের সম্পদের খোঁজে আরও অনুসন্ধানে তথ্য চাওয়া হয়েছে অন্যান্য দেশে। ফলে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর আরও অবৈধ সম্পদের খোঁজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান দল। 

দুদক সূত্রে জানায়, এসব সম্পদ ও পাচারকৃত অর্থ যাতে অন্যত্র হস্তান্তর না হয়, সেজন্য তাদের সব সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতেই আদালত এই নির্দেশ দিয়েছেন।

দুদক এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে করা অ্যাকাউন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনবিহীন মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে টাকা পাচার, আয়কর নথিতে সম্পদের তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য পেয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ৯ বছরে মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে তিনি (জাবেদ) ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামান এসব স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদক সূত্র আরও জানায়, সংশ্লিষ্ট দেশের ল্যান্ড রেজিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্টসহ অন্যান্য সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব টাকা বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন নেই। আয়কর নথিতে বিদেশে সম্পদ অর্জনের কোনো তথ্য নেই। জাবেদ ও তার স্ত্রী ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা আত্নীয়স্বজনের নামে কোনো সম্পদ আছে কিনা তাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এরূপ কিছু পাওয়া গেলে তা তদন্তে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।

দুদক ইতোমধ্যে মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে-বেনামে বিভিন্ন দেশে অর্জন করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক বা অবরুদ্ধ করার আদেশ ও অনুমতি চেয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন (পারমিশন পিটিশন নং ৪৫৩/২০২৪) করেছে।

দুদক একই সময়ে সাইফুজ্জামান ও রুখমিলার নামে বা তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন জানিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদক অনুসন্ধান টিমের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা অগ্রসর হচ্ছি। দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছি। আশা করছি, সবকিছু গুছিয়ে আইনের আওতায় আনতে পারবো।

দুর্নীতি দমন কমিশন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিদেশে অবৈধভাবে অর্জন করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি তদন্তের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডলকে টিম লিডার করে ৩ সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মাইনুদ্দিন ও উপ সহকারী পরিচালক মো. জুয়েল রানা। কমিশনে বিগত ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় সাইফুজ্জামান ও রুখমিলার বিদেশে অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধের জন্য আদালতের আদেশ প্রার্থনার অনুমতিও অনুমোদন দেওয়া হয়।

দুদক সূত্র জানায়, আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমতি দিয়ে স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের এইচ এম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস; সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ল্যান্ড ডিপার্টমেন্ট; যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট রেজিস্ট্রার নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডা-কে অবহিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন।

এছাড়া আদালত আরব আমিরাতের তিনটি ব্যাংক শাখায় খোলা ৪টি অ্যাকাউন্টসহ অন্যান্য অ্যাকাউন্টের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মানিলন্ডারিং বিভাগ, বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করার জন্য দুদকের তদন্ত টিমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কাজী আকতার হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন, ২০১২ এর সেকশন ৮-এ বলা হয়েছে, অপরাধ অনুসন্ধান বা তদন্তে অন্য দেশকে অনুরোধ জানাতে পারবে। যদি দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি নাও থাকে, তবু বিচারিক ও অন্যান্য কার্যধারা বিষয়ে কোন বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক সহায়তা যাচনা করা হইলে এবং উক্ত অপরাধে ওই দেশের আইনে অপরাধ শাস্তিযোগ্য হইলে উক্ত বিষয়ে সর্বোত্তম পারস্পরিক সহযোগিতা দিতে হবে।

ড. আকতার হামিদ বলেন, উক্ত আইনের সেকশন-৯ এ বলা হয়েছে, যেসব দেশের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে; সেসব দেশের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী অনুরোধ করতে পারবে। যদি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি না থাকে সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে এই অনুরোধ করা যেতে পারে।

বিদেশে অর্জিত সম্পদ ও মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যরিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচার সারা বিশ্বের একটি সমস্যা। সারা বিশ্বের রাষ্ট্র কাঠামোতে মানি লন্ডারিং ফৌজদারী অপরাধ। প্রত্যেক দেশ এই অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে। তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ আইনী কাঠামোতেও এর প্রয়োগ রয়েছে। অথচ আর্ন্তজাতিকভাবে একটি দেশের সাথে অপর দেশের মানি লন্ডারিং অনুৎসাহিত করতে আইনের বলিষ্ঠ প্রয়োগ নেই। ফলে পাচার করা টাকা ফেরত আনতে অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। তবে যেসব দেশের সাথে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে, তাদের অনুরোধ করলে রেজাল্ট আসতে পারে। চুক্তির বাইরেও পারস্পরিক আস্থা ও সম্পর্কের ওপর অনেক সমস্যার সমাধান নির্ভর করে। তবে তা নির্ভর করবে উভয় দেশের সরকারের সদিচ্ছার ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে এর পেছনে সময় দিতে হবে। সূত্র: বিএসএসনিউজ

SN
আরও পড়ুন