ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বিদেশে ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান, ৫২ বাংলাদেশির পাসপোর্ট জব্দ

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:২১ পিএম

বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ ও সম্পদের নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অধীনস্থ সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় বিদেশে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে উঠেছে। এই সম্পদের সঙ্গে যুক্ত ৫২ জন প্রভাবশালী বাংলাদেশিকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।

সিআইসি জানায়, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই ৫২ ব্যক্তি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাদের কর ও আয় বিবরণী যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। এনবিআর বিভিন্ন কর অঞ্চলের মাঠপর্যায়ের দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে।

তবে সিআইসি বলছে, আইনি বাধ্যবাধকতা ও কৌশলগত কারণে এখনই অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। অনুসন্ধান প্রায় শেষ পর্যায়ে, খুব শিগগিরই নাম প্রকাশ বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তালিকা পাঠানো হবে।

সিআইসি জানায়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত একটি বিশেষ তদন্ত দল সরেজমিন ঘুরে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা ও কুয়ালালামপুরে সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ৩৪৬টি বিদেশি সম্পত্তি শনাক্ত করা হয়েছে।

শুধু সম্পদ নয়, পাচারকৃত অর্থের বিনিময়ে বিদেশি নাগরিকত্বও কিনেছেন অনেকে। সিআইসি জানায়, অন্তত ৩৫২ জন বাংলাদেশি অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন অ্যান্টিগুয়া, অস্ট্রিয়া, ডোমিনিকা, মাল্টা, তুরস্ক, সেন্ট কিটস, নর্থ মেসিডোনিয়াসহ একাধিক দেশের। এসব নাগরিকত্ব পেতে ১২ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচের তথ্য পাওয়া গেছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করেছে। একইসঙ্গে সিআইডি-ও আলাদা অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক চারটি সংস্থা পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে কাজ করছে

  • দ্য স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (STAR)
  • ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (IACCC)
  • যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস
  • ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (ICAR)

এদের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত অর্থ থেকে কমিশন দেওয়া হবে বলে জানায় সূত্র। তদন্তে দেখা গেছে, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অনেকে রয়েছেন। নাম এসেছে-

  • এস আলম গ্রুপ
  • বেক্সিমকো
  • সিকদার গ্রুপ
  • নাসা গ্রুপ
  • ওরিয়ন ও সামিট গ্রুপ
  • আরামিট গ্রুপ (সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী)
  • আইপিই গ্রুপ (বিদেশি ব্যবসায়ী আদনান ইমাম)

এছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী একাধিক প্রভাবশালী নেতা, সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ীও এই তালিকায় রয়েছেন।

সিআইসির মহাপরিচালক অভিযোগ করেছেন, পূর্ববর্তী সরকার আমলে পাচারকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের CBS (Central Bank System) ডেটাবেজে নিজেদের লোক বসিয়ে তথ্য গোপন করেছিল। তবে বর্তমানে মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে সিআইসি।

গত আগস্টে সিআইসি ও এনবিআর চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-কে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি বলেন, দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে সম্পত্তি বানানো ভয়াবহ দেশদ্রোহিতা। এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে আর কেউ একই পথ ধরতে সাহস না করে। তিনি নির্দেশ দেন, দুদক, সিআইসি ও সিআইডিকে সমন্বিতভাবে তদন্ত চালিয়ে সব সম্ভাব্য দেশে অনুসন্ধান বিস্তৃত করতে হবে।

সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব বলেন, এখন পর্যন্ত যা ধরা পড়েছে, তা মোট পাচারের তুলনায় খুবই সামান্য। আরও বহু সম্পদের খোঁজ রয়েছে, যা উদঘাটনে সময় লাগবে। তদন্ত সম্পন্ন হলে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

DR/MMS
আরও পড়ুন